বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগের মৌসুম ধরা হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ডেঙ্গু সারা বছরব্যাপী হচ্ছে। এর মধ্যে আক্রান্তের গ্রাফ সবচেয়ে উপরের দিকে থাকে জুলাই ও আগস্ট মাসে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনে যে–সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তার চেয়ে সাত গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছে জুলাইয়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগস্ট মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কেমন হতে পারে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগস্টে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এই মাস হতে পারে চলতি বছরের ‘পিক সিজন’।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, আগস্ট মাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকবে বলে তাদের অনুমান। তিনি বলেন, যত বৃষ্টিপাত হবে, গরম বেশি পড়বে, যত আর্দ্রতা বাড়বে, যত বেশি অপরিকল্পিত নগরায়ন হবে, তত বেশি ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এডিসের জন্য আমরা সারা বছর একটা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছি। খবর বিবিসি বাংলার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর প্রকোপ কয়েক গুণ বেশি। এমন পরিস্থিতি সবশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার তার পরীক্ষাগারে এডিস মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত এই কয়েকটি বিষয়কে কম্পিউটার সিমুলেশন মডেলের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তিনি আশঙ্কা করছেন, বর্তমানের ডেঙ্গু পরিস্থিতি চলতি মাসে আরও ভয়াবহ হবে এবং সেটাই হতে পারে পিক সিজন।
কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এডিস মশার ধরন ও বৈশিষ্ট্য বদলানোর কারণে এদের প্রকৃতিতে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে যেখানে এই মশা শুধু দিনের বেলায় কামড়াত, এখন এটি দিনে–রাতে দুই বেলায় কামড়ায়। আগে যেখানে মশাটি স্বচ্ছ পানিতে বংশবিস্তার করত, বর্তমানে ময়লা পানিতেও এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বাইরের কৃত্রিম আলোয় সক্রিয় থাকায় এই মশা লম্বা সময় ধরে ডেঙ্গু সংক্রমণ করে যেতে পারছে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্ষা দেরিতে শুরু হওয়ায় ডেঙ্গু মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মশার বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তনসহ মানুষের আচরণগত কারণে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা সংস্থা আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন জানান, বৃষ্টির সাথে এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। আগস্টে বৃষ্টি সিজন থাকে পুরোপুরি। এ সময় এডিস মশা তার বংশ বিস্তারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পরিবেশ পায়। তাছাড়া বছরের এই সময়ে নির্মাণ কাজ বেড়ে যায়। পানির ব্যবহার বাড়ে। সেখানেও মশা বিস্তার লাভ করে।
অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, গত বছর ঢাকায় এডিস মশার ওপর জরিপ করে দেখা গেছে ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে কমিউনিটিতে মশার উপদ্রব প্রচুর বেড়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এডিস মশার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কোনো কর্মসূচি না নিলে আগামী দিনে ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে পারে। মশা নিয়ন্ত্রণের পরিস্থিতি এখন আর সিটি কর্পোরেশনের একার আয়ত্তে নেই বলে মনে করেন তিনি।
এক্ষেত্রে মশার বিস্তার ঠেকাতে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।