ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর সেখানে ভিসা ও কনস্যুলার সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের দূতালয় প্রধান মো. আল আমীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তাহীনতাজনিত অবস্থার প্রেক্ষাপটে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন আগরতলাতে সকল প্রকার ভিসা ও কনস্যুলার সেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এদিকে সোমবার ত্রিপুরার আগরতলায় হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনজন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজ ও বিবিসি বাংলার।
বাংলাদেশে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে সভা ডেকেছিল হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠন। সভা শেষে সংগঠনের ছয়জনের একটি প্রতিনিধিদল কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক সে সময় হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিড়ে ফেলে–ঘটনাস্থল থেকে এমন কিছু ভিডিওচিত্র পাওয়া গেছে। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে ও আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। পরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ার ঘটনা গভীর দুঃখজনক। ওই হামলার ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত হিসেবে বর্ণনা করে এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
গ্রেপ্তার সাত, তিন পুলিশ বরখাস্ত : ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে তিনজন পুলিশ কর্মীকে বরখাস্ত ও ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে।
ত্রিপুরা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা ছাড়া আর কে কে সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় জড়িত ছিল তা ভিডিও ফুটেজ দেখে খুঁজে বের করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশ যথেষ্ট সংখ্যায় ছিল। সহকারী হাইকমিশন পরিসরের ভেতরে–বাইরে মিলিয়ে ২৬০ জন ডিউটিতে ছিলেন। কিন্তু গোটা ঘটনা মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায়। আমরা কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই বিক্ষোভকারীদের বাধা দিই। তবে ওই কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়ে যায়। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস এবং পুলিশ বাহিনী ছিল। তারা দ্রুতই ব্যবস্থা নিয়েছিল। তবুও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে বাহিনীর তিনজনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। যে ডিএসপি সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, তাকে ক্লোজ করা হয়েছে।
পশ্চিম ত্রিপুরার পুলিশ সুপার কিরণ কুমার বলেন, এ ঘটনায় নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেঙ (এনসিসি) থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশ।