রাঙ্গুনিয়ায় বাড়ছে আখের আবাদ। বাজারে চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। লাভবান হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। এছাড়া চট্টগ্রামসহ সারা দেশে সরবরাহ হয় রাঙ্গুনিয়ার সুস্বাদু আখ। সরকারি প্রণোদনা পেলে এই খাতে চাষাবাদ আরও বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর রাঙ্গুনিয়ায় ৫৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হলেও এবার হয়েছে ৫৮ হেক্টরে। এ বছর হেক্টর প্রতি ৮০ মেট্রিক টন আখের ফলন হয়েছে। এভাবে প্রতি বছর আখের আবাদ বাড়ছে রাঙ্গুনিয়ায়। আখের সাথে সাথী ফসল হিসেবে অন্যান্য ফসলও আবাদ করা যায়। এতে জমিতে আগাছা কম হয়। ফলে মূল ফসলের ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় দেশি জাতের পাশাপাশি উন্নত জাতের আখের চাষ হয়েছে। কমপক্ষে ১২/১৩ ফিট লম্বা মাঝারি মোটা সারিবদ্ধভাবে সোজা দাঁড়িয়ে থাকা আখগুলো এখন পরিপুষ্ট হয়ে হলুদ আকার ধারণ করেছে। প্রতিটি আখ খুচরা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সাত-আট মাসেই আখের ফলন পাওয়া যায়। আখ চাষ করে ধানের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। ফলে রাঙ্গুনিয়ার কৃষকরা এই চাষাবাদে ঝুঁকছে বেশি।
রাজানগর ভরনছড়ি এলাকার কৃষক হুমায়ুন আহমেদ বলেন, তিনি এবার দেড় কানি (৬০ শতক) জমিতে আখের আবাদ করেছেন। কানি প্রতি (৪০ শতক) তার ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। বিক্রির পর তার কানিতে খরচ বাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা করে লাভ হয়েছে। শিয়ালবুক্কা গ্রামের নেজাম উদ্দিন ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন। তিনি লাভের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে ফ্রেন্সবীন, মূলা ও লালশাক লাগিয়ে বাড়তি উপার্জন করেছেন বলে জানান।
রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার কৃষক মো. হাশেম বলেন, আমাদের গ্রামের সবারই আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দাম পেয়ে আমরা খুব খুশি। তবে সরকার যদি এই খাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতো তবে কৃষকরা আরও বেশি উপকৃত হতো।
ইসলামপুর খতিবনগর এলাকার কৃষক শাহ আলম বলেন, আখ চাষে লাভ বেশি, খচর কম এবং পরিশ্রমও কম। এছাড়া সাথী ফসলও চাষাবাদ করা যায়। তাই এই চাষে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে না।
রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট এলাকার আখ বেপারি রহিম উদ্দিন বলেন, খুচরা প্রতিপিচ আখ তারা গড়ে ২০ টাকা হারে কিনেছেন। বাজারে তার ৩৫-৫০ টাকা হারে বিক্রি করতে পারেন বলে জানান। তিনি এবার ১ লাখ টাকা দিয়ে ৩টি আখের বাগান কিনেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ৭০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেপারিরাও রাঙ্গুনিয়া থেকে আখ কিনে নিয়ে যান বলে তিনি জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, বেলে ও বেলে-দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। তাই রাঙ্গুনিয়ায় আখ প্রচুর সম্ভাবনাময়ী একটি ফসল। তবে আখে লালচে ও রেখা নামে দুটি রোগ দেখা যায়। পাশাপাশি মাজরা পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারলে আখের ভালো ফলন হয়। তাই সঠিক পরিমাণে সার, পানি ও প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে আখের ভাল ফলন পাওয়া যায়। কৃষকদের আখ চাষে উৎসাহিত করতে এবং সহায়তা করতে মাঠ পর্যায়ে তারা কাজ করছেন।