আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ব্যাপক কর্মসূচিব্যাপক কর্মসূচি

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জমান চৌধুরী বাবুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে মরহুমের পরিবার, উপজেলা প্রশাসন, আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, বিশেষ মোনাজাত, কবর জেয়ারত, পুুষ্পমাল্য অর্পণ ও তবারুক বিতরণ। এসব কর্মসূচিতে মরহুমের জ্যেষ্ঠপুত্র ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জমান চৌধুরী জাবেদ এমপি প্রধান অতিথি থাকবেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, আখতারুজ্জমান বাবুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল, পুস্পমাল্য অর্পণ, জেয়ারত ও তবারুক বিতরণের আয়োজন করেছে। কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেবে। আনোয়ারা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী জানান, আখতারুজ্জামান বাবুর মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যদায় পালন করা হবে। কর্মসূচিগুলোতে প্রয়াত নেতার প্রতি ভালবাসায় হাজারো নেতাকর্মী যোগ দেবেন। প্রয়াত নেতার স্মরণে ইতোমধ্যে আনোয়ারার বিভিন্ন সড়কে তোরণ নির্মাণ, ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু রাজনীতিক, শিল্পোদ্যোক্তা, সংগঠকসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছাড়াও জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চারবার। নবম জাতীয় সংসদে তিনি ছিলেন পাট বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি। ১৯৪৫ সালে আনোয়ারার হাইলধর গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আখতারুজ্জামান বাবু। তাঁর পিতার নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি আইনজীবী ছিলেন। তাঁর মাতার নাম খোরশেদা বেগম। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পপতি বোয়ালখালীর মরহুম সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বিতীয় কন্যা নুর নাহার জামানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আখতারুজ্জামান বাবু ১৯৫৮ সালে পটিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ঐ বছরই ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে পড়ার সময় তিনি বৃত্তি পেয়ে আমেরিকার ইলিনয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ভর্তি হন। পরে তিনি নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনে পড়াশোনা করেন। ওখান থেকে এসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরেন। তিনি ১৯৬৫ সালে ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন বাবু। ১৯৬৭ সালে তিনি আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ’৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন। ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় তার পাথরঘাটাস্থ জুপিটার হাউজ থেকে সংগ্রাম কমিটির কর্মকাণ্ড পরিচালিত হত। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামের আসার পর জুপিটার হাউস থেকে সাইক্লোস্টাইল করে প্রচার করা হয়। তার বাসা থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ভারতে যান এবং সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে তিনি বিশ্বজনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল সফর করেন। তিনি প্রথম লন্ডনে যান। সেখান থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য হয়ে আমেরিকায় যান। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ’৭২ সালের সংবিধানের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। স্বাধীনতার পর ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ২০০৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার পর আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ’৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর আখতারুজ্জামান বাবু নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং পরবর্তীতে দলের পুনরুজ্জীবন ও পুনর্গঠনে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও বাবু বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি কারা নির্যাতন ভোগ করেন।
কেবল রাজনীতিতেই নয়, আখতারজ্জামান বাবু একজন সফল ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তা। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি বাটালি রোডে রয়েল ইন্ডাস্ট্রি নামে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে তিনি আসিফ স্টিল মিল, জাভেদ স্টিল মিল, আসিফ সিনথেটিক, প্যান আম বনস্পতি, আফরোজা অয়েল মিল, বেঙ্গল সিনথেটিক প্রোডাক্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ভ্যানগার্ড স্টিল মিল, সিনথেটিক রেজিন প্রোডাক্ট ক্রয় করে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম দু’দশকে জামান শিল্পগোষ্ঠীর গোড়াপত্তন করেন। তিনি বিদেশি মালিকানাধীন আরামিট মিল ক্রয় করে সেটিকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করান। বাংলাদেশ বেসরকারি ব্যাংকিং সেক্টর প্রতিষ্ঠায় তিনি পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তিনি দেশে দ্বিতীয় বেসরকারি ব্যাংক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড (ইউসিবিএল) এর উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দু’দফায় চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ছিলেন এফবিসিসিআইর প্রেসিডেন্টও। ওআইসিভুক্ত দেশসমূহের চেম্বারের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি ৭৭ জাতি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ব্যক্তি জীবনে ৩ পুত্র ও ৩ কন্যার জনক। তাঁর বড় ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বর্তমানে আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। মেজ ছেলে আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং ইউসিবির ইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট ছেলে আসিফুজ্জামান চৌধুরী জিমিও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইমরান খান গুলিবিদ্ধ
পরবর্তী নিবন্ধবিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে, খালেদাকে আবারো জেলে পাঠাব : প্রধানমন্ত্রী