আখতারুজ্জামান ইলিয়াস : সমাজবাস্তবতার রূপকার

| শনিবার , ৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩১৯৯৭)। একজন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ তার রচনাকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী সুষমা। বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র পরেই তিনি সর্বাধিক প্রশংসিত বাংলাদেশি লেখক। তাকে সমাজবাস্তবতার অনন্যসাধারণ রূপকার বলা হয়েছে। তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বগুড়া শহরের নিকটবর্তী চেলোপাড়ায়। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে ম্যাট্রিকুলেশন ও ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স এবং ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলায় এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ইলিয়াস কর্মজীবন শুরু করেন জগন্নাথ কলেজে প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে। এরপর তিনি মিউজিক কলেজের উপাধ্যক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি মগ্ন ছিলেন লেখালেখিতে। প্রগতিশীল রাজনীতি ও সংস্কৃতির সমর্থক ছিলেন ইলিয়াস। তাঁর রচনাতে সে পরিচয় সুস্পষ্ট।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘অন্যঘরে অন্যস্বর’, ‘খোঁয়ারি’, ‘দুধভাতে উৎপাত’, ‘চিলেকোঠার সেপাই’, ‘দোজখের ওম’, ‘খোয়াবনামা’, ‘সংস্কৃিতর ভাঙা সেতু’ ইত্যাদি। ইলিয়াসের রচনাশৈলীর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য আঞ্চলিক সংলাপের ব্যবহার। বিখ্যাত উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’র জন্য তিনি ‘সাদত আলী আকন্দ’ পুরস্কার এবং কলকাতা থেকে ‘আনন্দ পুরস্কার’ লাভ করেন।

তাঁর বেশ কিছু রচনায় ফকির সন্ন্যাসী আন্দোলন, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, পাকিস্তান আন্দোলন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতি ঐতিহাসিক বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। শ্রেণি শোষণের মধ্যে আটকে যাওয়া সমাজব্যবস্থা কতিপয় সুবিধাবাদী গোষ্ঠী কী করে রাজনৈতিক ফায়দা লুণ্ঠনের অপপ্রয়াস চালায়, ধর্মকে ব্যবহার করে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের হীন প্রচেষ্টায় তা ইলিয়াস তাঁর রচনায় ফুটিয়ে তোলেন নিপুণভাবে। তাই লেখকের রচনায় সমাজমনস্কতা ও কালচেতনা সম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় খুঁজে পাওয়া যায়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকিশোর গ্যাং ও সামাজিক অস্থিরতা রোধ করা হোক