আক্রান্তদের অর্ধেকই জানে না তাদের ডায়াবেটিস

সচেতন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস আজ

জাহেদুল কবির | বুধবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৮ পূর্বাহ্ণ

দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের অর্ধেক মানুষ জানেই না তারা এ রোগে আক্রান্ত। প্রায় সময় অন্য কোনো রোগের পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে গিয়ে রোগটি ধরা পড়ে। বিশেষ করে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি রুগির কোনো লক্ষণ থাকে না। তাই তারা প্রথম দিকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বংশগত কারণে ও পরিবেশের নানা প্রভাবে ডায়াবেটিস হয়। কখনো কখনো অন্যান্য রোগের ফলেও ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। সব বয়সীদের এ রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর সারে না। তবে একে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বলা যায়, এটি আজীবনের রোগ। ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা, দুর্বল লাগা, ঘোর ঘোর ভাব আসা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, সময়মতো খাওয়াদাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া, মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া, কোনো কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া, শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলে দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা, চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব, বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা এবং চোখে কম দেখতে শুরু করা ডায়াবেটিস রোগের অন্যতম লক্ষণ। ডায়াবেটিসের কারণে এমনকি বন্ধ্যাত্বও হতে পারে।

তারা বলেন, ডায়াবেটিস প্রতিরোধে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল ও মোটা শস্যদানা জাতীয় খাবার খেতে হবে। এতে টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। সুষম খাবার টাইপ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনে। তবে বর্তমানে হাই ক্যালরি ও অপুষ্টিকর সস্তা খাবার বিশেষত ফাস্ট ফুড গ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে টাইপ২ ডায়াবেটিস। এছাড়া স্থূলতা, কায়িক পরিশ্রম না করাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ। তবে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগে বর্তমানে একজন সহযোগী অধ্যাপক, দুজন সহকারী অধ্যাপক এবং একজন সহকারী রেজিস্ট্রার কর্মরত আছেন। অন্যদিকে রেজিস্ট্রারের পদই সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া ওয়ার্ডে নেই কোনো ইনডোর মেডিকেল অফিসার। বিভিন্ন বিভাগ থেকে আগত স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং অনারারি চিকিৎসক দিয়ে ওয়ার্ড চালাতে হচ্ছে। এছাড়া একমাত্র সহকারী রেজিস্ট্রারকে ওয়ার্ড এবং বহির্বিভাগ দুটোই সামলাতে হচ্ছে। যদিও সাময়িকভাবে একজন ডাক্তার বর্তমানে কর্মরত আছেন। কিন্তু যে কোনো সময় তিনি বদলি হয়ে গেলে আউটডোর রুগি দেখতে হিমশিম খেতে হয়।

অন্যদিকে গত ১ বছরে ১৬টি বেডের বিপরীতে প্রায় ৫০০ রোগী এবং আউটডোরে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার রোগীকে হরমোনজনিত রোগের সেবা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়ার্ডের জন্য ৪ জন মেডিকেল অফিসার এবং বহির্বিভাগের জন্য ৪ জন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করা জরুরি বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওয়ার্ডে মোট শয্যা আছে ১৬টি। এর মধ্যে ৮টি পুরুষ এবং ৮টি মহিলার জন্য সংরক্ষিত।

তবে বর্তমানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য হরমোন রোগ বাড়ার কারণে নির্ধারিত শয্যার বাইরে দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। শয্যার অতিরিক্ত রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ওয়ার্ডে নেই কোনো এইচডিইউ বেড। জটিল রোগীদের তাই বাধ্য হয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এতে রোগীদের চিকিৎসা ও ফলোআপ করতেও ডায়াবেটিস চিকিৎসকদের মেডিসিন ওয়ার্ডে অনকলে গিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। তাই ওয়ার্ডে অন্তত চারটি এইচডিইউ বেড স্থাপনসহ মোট শয্যা ১৬ থেকে ৩২এ উন্নীত করা প্রয়োজন।

চমেক হাসপাতালে এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. ফারহানা আক্তার আজাদীকে বলেন, ডায়াবেটিস আজীবনের রোগ। এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোনো সুযোগ নেই। তবে বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার নামে অনেক অপচিকিৎসা চলছে। এখানে কিটো ডায়েট তত্ত্ব সামনে এনে বলা হচ্ছে, ওষুধ না খেয়েই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে অনেক চটকদার বিজ্ঞাপনও হচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এ তালিকায় স্বীকৃত মেডিকেল থেকে এমবিবিএস পাশ করা ডাক্তারও কিটো ডায়েট তত্ত্ব নিয়ে ‘ফেসবুকইউটিউবে ভিউ’ ব্যবসা করছেন। সাধারণ মানুষ তাদের সেই তত্ত্ব গ্রহণ করছে। অথচ গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত কম শর্করা খেলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এছাড়া ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় অনেকে মনে করেন, একবার ইনসুলিন দিলে সারা জীবন দিতে হবে। আসলে ১ম শনাক্তের পর, ইনসুলিন দেয়ার পরে অবস্থার উন্নতি হলে আবার মুখের ওষুধে ফিরিয়ে আনা যায়। সাধারণ মানুষকে এসব বিভ্রান্তি থেকে সরে আসতে হবে। কোনো ধরনের অপপ্রচারে প্রলুব্ধ হয়ে অপচিকিৎসা নেয়া যাবে না।

জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস : আজ জাতীয় ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের উদ্যোগে ১০০ জন রোগীকে নিয়ে ডায়াবেটিস সচেতনতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসৈকতে এক রাতে ডিম পাড়লো ১৭টি জলপাই রঙা কাছিম
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের চেয়ে সিন্ডিকেট কীভাবে শক্তিশালী হয়?