আকিবের মাথায় হাড় প্রতিস্থাপন

৬ ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৯ মার্চ, ২০২২ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষের মারধরে আহত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) শিক্ষার্থী মাহাদি জে আকিবের মাথার হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আকিবের মাথার এ হাড় সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকরা। চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে এ অস্ত্রোপচার চলে। অস্ত্রোপচারে নিউরোসার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের ৮-১০ জন চিকিৎসক অংশ নেন। এ সময় মাহাদি জে আকিবের বাবা স্কুলশিক্ষক গোলাম ফারুক মজুমদার ওটির (অস্ত্রোপচার কক্ষের) বাইরে অপেক্ষারত ছিলেন।
সকাল ৯টায় শুরু হয়ে বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে এ অস্ত্রোপচার শেষ হয় জানিয়ে অস্ত্রোপচারে নের্তৃত্ব দেয়া অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, প্রায় ৬ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে তার (আকিবের) মাথার খুলির হাড়টি প্রতিস্থাপন করতে আমরা সফল হয়েছি। অস্ত্রোপচারের পর তার জ্ঞান ফিরেছে। রেসপন্স করছে।
এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর প্রথম দফা অস্ত্রোপচারের সময় আকিবের মাথার হাড়ের একটি অংশ খুলে তাঁর পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছিল। গতকাল পেটের চামড়ার নিচে রাখা অংশটি বের করে সেটি মস্তিস্কে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম দফায় অস্ত্রোপচারের প্রায় পাঁচ মাস পর সেই হাড় পুনরায় পেট থেকে বের করে মাথায় প্রতিস্থাপন করা হলো।
দুই ভাগে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে জানিয়ে নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, প্রথমে পেটের চামড়ার নিচে রাখা হাড়ের অংশটি বের করা হয়। পরে তা মস্তিস্কে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই অস্ত্রোপচার একটি চ্যালেঞ্জ ছিল জানিয়ে ডা. নোমান খালেদ চৌধুরী বলছেন, শেষ পর্যন্ত আমরা চ্যালেঞ্জ জয় করতে সক্ষম হয়েছি। অস্ত্রোপচার সফল হওয়ার পিছনে ভূমিকা রাখা সকল সহকর্মীদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান এই চিকিৎসক।
অস্ত্রোপচারের পর আকিবকে আইসিইউতে (নিবিড় পর্যবেক্ষণে) রাখা হয়েছে। তাকে আইসিইউর ৭ নং শয্যায় রাখা হয়েছে জানিয়ে আইসিইউ বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশীদ আজাদীকে বলেন, সে (আকিব) ভালো আছে। হয়তো মঙ্গলবারই (আজ) তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হতে পারে।
এদিকে অস্ত্রোপচারের পর আকিবকে দেখতে যান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম হাসান ও চমেক অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার। আকিবের শারীরিক অবস্থা ভালো আছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম হাসান।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে কয়েকজন আহত হন। বিবাদমান দুই গ্রুপের এক পক্ষ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী এবং অপর পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। রাতের ঘটনার জের ধরে ৩০ অক্টোবর দুপুরে মাহাদি জে আকিবের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর চমেকের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
হামলায় আকিবের মাথায় গুরুতর জখম হয়। ওই দিনই (৩০ অক্টোবর) অস্ত্রোপচার করে তাঁর মাথার হাড়ের অংশটি পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়। এ সময় তাঁর মাথা সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো ছিল। তাতে লেখা ছিল ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না’। এই ছবি তখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। প্রথম অস্ত্রোপচারের পর আকিব গত বছরের ১৮ নভেম্বর বাড়ি ফেরেন। বাড়ি থেকে এসে গত মাসে কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেন। ২ মার্চ অস্ত্রোপচারের জন্য পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হন আকিব। গতকাল তার মস্তিস্কে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলি চালু করতে আইনি নোটিশ
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ ২ এপ্রিল থেকে বন্ধ