আকার বেড়েছে আহ্বায়ক কমিটির

বাদ পড়েছেন এক যুগ্ম আহ্বায়ক, স্থান হয়নি সিনিয়র নেতাদের, তৃণমূলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

মোরশেদ তালুকদার | বুধবার , ৭ মে, ২০২৫ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

ইদ্রিস মিয়াকে আহ্বায়ক ও লায়ন মো. হেলাল উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় গত ২ ফেব্রুয়ারি। এর তিন মাস পর গতকাল মঙ্গলবার আকার বৃদ্ধি করে তা ৫৪ সদস্যে উন্নীত করে কেন্দ্র। তবে এবার কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন সেই পাঁচ সদস্যের একজন। একইভাবে সাবেক আহ্বায়কসহ দক্ষিণ জেলার কয়েকজন সিনিয়র নেতারও স্থান হয়নি বর্ধিত এ কমিটিতে। এছাড়া স্থান পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে আছে নানা অভিযোগ। আবার দায়িত্বশীল নেতাদের অনেকে দাবি করছেন, তরুণপ্রবীণের সমন্বয় করা হয়েছে কমিটিতে। আন্দোলনসংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কমিটি ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গতকাল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরে আকার বৃদ্ধি করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। এতে আহ্বায়কসদস্য সচিব ছাড়াও একজন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৪৩ জনকে সদস্য করা হয়।

বাদ পড়েছেন লেয়াকত আলী : গত ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত ৫ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক পদ পাওয়া লেয়াকত আলী বাদ পড়েছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে। অবশ্য ফেব্রুয়ারি মাসে কমিটি ঘোষণা হওয়ার পরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট করে লেয়াকত আলী লিখেন, ‘দল আমাকে যথেষ্ট মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। আমাকে দেওয়া জাকাতি পদটি অন্য কাউকে দিয়ে খুশি করুন।’ তবে এর কিছুক্ষণ পরেই পোস্টটি ডিলিট করে লিখেন, ‘দক্ষিণ জেলা কমিটিতে যে লিয়াকত দেখা যাচ্ছে সেটি আমি নই।’ গতকাল পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা শেয়ার করেও তিনি পোস্ট দেন।

স্থান পাননি সিনিয়র নেতারা : ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তারা। গতকাল অনুমোদিত কমিটিতে স্থান হয়নি আবু সুফিয়ানের। এমনকি তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজনও স্থান পাননি। এছাড়া দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সাবেক সাংসদ সরওয়াল জামাল নিজামেরও স্থান হয়নি। স্থান হয়নি বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী ইছহাক চৌধুরী, ১০ নং আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হামিদুল হক মন্নান ও পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজী আবুল কালাম আবুর।

আজাদীর বোয়ালখালী প্রতিনিধি এসএম নাঈম উদ্দীন জানান, বোয়ালখালী উপজেলার তিন নেতার স্থান না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পোস্ট করেছেন তাদের কর্মীরা।

এ বিষয়ে হাজী ইছহাক চৌধুরী বলেন, রাজপথে আন্দোলনসংগ্রাম করেছি। নির্যাতন সহ্য করার পরেও গ্রুপিং রাজনীতির ষড়যন্ত্রে কমিটিতে স্থান পাইনি।

হামিদুল হক মন্নান বলেন, আমি যেহেতু আবু সুফিয়ানের সাথে রাজনীতি করি সেহেতু আমি ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছি। এছাড়া আমি আর কিছুই দেখছি না। আমি আন্দোলনসংগ্রামে ছিলাম। শুধুমাত্র গ্রুপিং রাজনীতির কারণে কমিটি থেকে বাদ পড়েছি।

আবুল কালাম আবু বলেন, পৌরসভা নির্বাচনে আমার ভাই (আওয়ামী লীগ সমর্থিত) প্রার্থী হওয়ায় আমি ভাইয়ের পক্ষে কাজ করেছিলাম। তাই আমাকে কমিটিতে রাখা হয়নি বলে ধারণা করছি।

আছে নানা অভিযোগ : গতকাল ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২৯ নম্বর সদস্য হয়েছেন রাজীব জাফর চৌধুরী। তার সদস্যপদ নিয়েও ফেইসবুকে চলছে নানা সমালোচনা। দাবি করা হচ্ছে, তারা প্রয়াত বাবা জাফর আহমদ চৌধুরী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ২০১৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন শেখ হাসিনা, যা গতকাল অনেকেই শেয়ার করছেন। তাছাড়া জাফর আহমদ চৌধুরী ২০০১ সালে চট্টগ্রাম১৫ (সাতকানিয়ালোহাগাড়া) আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তার স্ত্রী হাসিনা জাফর ২০১৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম৩১ সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।

এদিকে কমিটির ৪৪ নং সদস্য হেলাল উদ্দীনের সাথে আওয়ামী লীগ নেতার ছবি পোস্ট করে অনেকে সমালোচনা করছেন।

নবগঠিত কমিটির সদস্য ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম আজাদীকে বলেন, আন্দোলনসংগ্রামে ছিল এ রকম ১৫ জনের বেশি ঠাঁই হয়নি কমিটিতে। আওয়ামী লীগের দোসর ও আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের চেষ্টা হয়েছে কমিটিতে। এটা দুঃখজনক। দক্ষিণের এক নেতার এপিএসকেও সদস্য করা হয়েছে, যিনি অনেক জুনিয়র। দুজন প্রবাসী আছে বলেও শুনেছি। দলের হাই কমান্ডের কাছে আহ্বান থাকবে তদন্ত স্বাপেক্ষে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের দোসরদের যেন বিবেচনা করে বাদ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আন্দোলনসংগ্রামে যারা ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কমিটি হওয়ার পর থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রাম করেছি। সবগুলোতে লেয়াকত আলীকে দাওয়াত দিয়েছি, কিন্তু একটিতেও আসেননি। হয়তো কেন্দ্র বিষয়গুলো বিবেচনা করেছে। রাজিবের বাবা ২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ থেকে রিজাইন করেন। তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপির সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় রাজীব বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। হেলাল মক্কা বিএনপির সাথে জড়িত। সিনিয়র নেতাদের বাদ পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, সিনিয়রদের বিষয়ে আমাদের সুপারিশ করার সুযোগ নেই। এটা কেন্দ্রের নিদ্ধান্ত।

কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন : গতকাল অনুমোদিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হচ্ছেন আলী আব্বাস। যুগ্ম আহ্বায়করা হচ্ছেন মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, আজিজুল হক চৌধুরী, আসহাব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আনোয়ার চৌধুরী, জামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, রেজাউল করিম চৌধুরী নেছার ও সাঈফুদ্দিন সালাম মিঠু।

সদস্যরা হচ্ছেন শেখ মোহাম্মদ মহি উদ্দিন, ইফতেখার মহসিন চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ খান, এনামুল হক এনাম, বদরুল খায়ের চৌধুরী, এস এম মামুন মিয়া, আমিনুর রহমান চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, নাজমুল মোস্তফা আমিন, মাস্টার মোহাম্মদ লোকমান, শওকত আলম চৌধুরী, ছলিম উদ্দিন চৌধুরী, হাজী মো. রফিকুল আলম, মাস্টার মোহাম্মদ রফিক, রাজীব জাফর চৌধুরী, সাজ্জাতুর রহমান চৌধুরী, সরওয়ার হোসেন মাসুদ, জাহাঙ্গীর কবির, হাজী মোহাম্মদ ওসমান, জাগির আহমদ, আমিনুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক বেলাল, জসীম উদ্দিন, সালাহ উদ্দিন চৌধুরী সোহেল, শেফায়েত উল্লাহ, ফজলুল কবির ফজু, মোহাম্মদ শাহীনুর শাহীন, মোহাম্মদ ঈসমাইল, ইফতেখার হোসেন চৌধুরী, হেলাল উদ্দিন, জাবেদ মেহেদী হাসান সুজন, মোহাম্মদ ইব্রাহীম, দিল মোহাম্মদ মঞ্জু, এম মনছুর উদ্দিন, মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, সালেহ জহুর, দেলোয়ার আজীম, শাহাদাত হোসেন সুমন, মোস্তাফিজুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদুল আজহার ছুটি ১০ দিন
পরবর্তী নিবন্ধফিরলেন খালেদা জিয়া বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস