আকর্ষণ যখন গয়ালে

কোরবানির বাজার

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | রবিবার , ১৮ জুলাই, ২০২১ at ৬:৪২ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির বাজারে আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে গৃহপালিত গয়াল। বিলুপ্তপ্রায় বন-গরু প্রজাতির এই পশুটি চট্টগ্রামে ‘চিটাগাং বাইসন’ নামেও খ্যাত। এই ধরনের একটি গয়ালের খামার গড়ে তুলেছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের সুখবিলাস গ্রামের এরশাদ মাহমুদ। ৩টি গয়াল দিয়ে শুরু করলেও এখন তার খামারে রয়েছে শতাধিক গয়াল। গত ১৩ বছরে ছোট-বড় প্রায় ৪ শতাধিক গয়াল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এবারের কোরবানিতেও আকর্ষণ গয়ালে।
সাবেক জেলা পিপি ও পদুয়ার সুখবিলাস গ্রামের মরহুম অ্যাডভোকেট নুরুচ্ছফা তালুকদারের ছেলে এরশাদ। তিনি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের ছোট ভাই। ১৯৮৮ সাল থেকে সফল মাছ চাষি হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। হালদা ও লক্ষ্মীপুরের রায়পুর থেকে মাছের পোনা এনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মৎস্যচাষের ধারণা আশপাশের কয়েক গ্রামে সমপ্রসারণ করেন তিনি। তার দেখাদেখি এলাকায় এখন শতাধিক মাছ চাষি। বর্তমানে প্রায় দেড়শ একর জমির উপর রয়েছে তার ৪৮টি মৎস্য প্রকল্প। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে জাতীয় পর্যায়ের শ্রেষ্ঠ মৎস্য খামারির পুরস্কার নেন তিনি। সর্বশেষ বিলুপ্ত প্রজাতির বনের গয়ালকে গৃহপালিত গরুর মতো করে পালন করার স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের একটি বেরসকারি টিভি চ্যানেল থেকে ‘পরিবর্তনের নায়ক’ ক্যাটাগরিতে এগ্রো অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত প্রজাতির গয়ালের খামার। ছোটবেলায় পটিয়ার নানাবাড়িতে গিয়ে প্রথম গয়াল দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এরশাদ মাহমুদ। সেই থেকে স্বপ্ন ছিল গয়াল পালনের। ২০০৮ সালে সাড়ে চার লাখ টাকায় মাদিসহ তিনটি গয়াল কিনে নিজ গ্রাম সুখবিলাসের খামারে লালন পালন শুরু করেন। বছর চারেকের মধ্যে প্রাকৃতিক প্রজননের মাধ্যমে খামারে গয়ালের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০টি। একেকটি গয়ালের ওজন ৩০০ থেকে ৬০০ কেজি। দাম দেড় থেকে চার লাখ টাকা।
এখন খামারে আছে ছোট-বড় শতাধিক গয়াল। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে ৬৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছিলেন ২০টি। এবার বিক্রির টার্গেট ৫০টি, যার দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬০০ কেজি ওজনের একটি গয়ালের দাম হাঁকা হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা। গত রমজান থেকে এখন পর্যন্ত ২৫টি গয়াল বিক্রি হয়েছে। ঢাকা, রাজশাহী, কুমিল্লা থেকে এসে খামার থেকে গয়াল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। কোরবান উপলক্ষে আরও ২৫টি গয়াল বিক্রির টার্গেট আছে। এর মধ্যে ১০ মণের ঊর্ধ্বে রয়েছে ১০টি; যেগুলো সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে ঊর্ধ্বমূল্যে বিক্রি করা হবে। এছাড়া বাকিগুলো ৪ থেকে ৮ মণের মধ্যে।
চট্টগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে বন-গরু প্রজাতির গয়াল পালনে সাফল্য পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। গৃহপালিত পশু হিসেবে খামারে লালন পালন হওয়ায় এই পশুর বংশ বৃদ্ধি হচ্ছে। প্রতি বছর কোরবান এলেই গয়ালের চাহিদা বেড়ে যায়।
এরশাদ মাহমুদ বলেন, এক সময় গয়াল বন্যপ্রাণী হিসেবে সংরক্ষিত থাকলেও ১৯৬৪ সাল থেকে এটি গৃহপালিত পশু হিসেবে স্বীকৃত। বনজঙ্গলে ঘেরা আমার খামারে প্রাকৃতিকভাবেই গয়ালের প্রজনন হচ্ছে। খাদ্য হিসেবে ভুসি, লবণ, কুঁড়া, কাঁচা ঘাস ও শুকনা খড় দেওয়া হয়। এদের দেহে কৃত্রিম ওষুধ প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। গয়াল ১৫-১৬ বছর পর্যন্ত বাঁচে। ১০-১১ মাস গর্ভধারণের পর মাদি গয়াল একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। গাভীর মতো গয়ালের ওলান নেই, স্তনবৃন্ত ছোট হওয়ায় গয়াল থেকে দুধ দোয়ানো যায় না। গয়াল মূলত মাংসের চাহিদা পূরণ করে। মাংস খুবই সুস্বাদু।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, গয়াল তৃণভোজী। গহিন বনের ছোট ছোট ঝোপে এরা দল বেঁধে থাকে। তবে এটি এখন গৃহপালিত পশু হিসেবে স্বীকৃত। গয়ালের মাংসে কোলেস্টেরল কম হওয়ায় মানবদেহের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপতিত জমিতে সবজি চাষে সাফল্য
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় রাতের খাবার খেয়ে অজ্ঞান একই পরিবারের ৫ সদস্য