আকরাম-মঞ্জুর কাছেও এই জয় ঐতিহাসিক এবং স্মরণীয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

এক মাস আগেও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে চট্টগ্রামের তিনজন পরিচালক ছিলেন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর আ. . . নাছির উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। ফলে বিসিবিতে এখন চট্টগ্রামের দুজন পরিচালক। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর ক্রিকেট বোর্ডে যখন কঠিন সময় চলছিল তখন ৭/৮ জন পরিচালক বোর্ডের হাল ধরেন। তাদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের দুই পরিচালক আকরাম খান এবং মনজুর আলম মঞ্জু। গতকাল বাংলাদেশ দল পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করে ইতিহাস রচনা করেছে তাতে দেশের অপামর ক্রিকেট প্রেমীর মত উচ্ছসিত এই দুজনও। দুজনই বলছেন এটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় সাফল্য। এই সাফল্যে তারাও উদ্বেলিত। দুজনই চান এই সাফল্য যেন সামনের দিকে যাওয়ার সিড়ি হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক, প্রধান নির্বাচক থেকে বিসিবি পরিচালক আকরাম খান। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে জড়িয়ে রয়েছেণ ক্রিকেটের সাথে। তিনি মনে করছেন এই জয় দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে স্মরণীয় জয়। তিনি বলেন টেস্ট ক্রিকেট জিততে পারাটাই সবচাইতে বড় গৌরবের। টেস্ট জিততে পারলেই আপনার শক্তিমত্তা প্রমানীত হয়। তাইতো বিশ্বজুড়ে টেস্ট ক্রিকেটের মূল্যায়নটা বেশি। তিনি বলেন ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর ক্রিকেট বোর্ড যখন অভিভাবকহীন তখন আমরা সাত/আট জন যারা ছিলাম তারা হাল ধরেছি। কারন ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রমশ উপরের দিকে যাচ্ছে। আমাদের ফিউচার ট্যুর প্লান থাকে, সিরিজ প্ল্যান থাকে। তাই আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি বোর্ডের হাল ধরতে। আর এমন এক অবস্থায় এ ধরনের সাফল্য সত্যিই বোর্ডে যারা কাজ করি তাদেরও সাহস যোগায়। তিনি বলেন টেস্ট ক্রিকেটের জণ্য আমাদের ২৫/৩০ জনের আলাদা একটা গ্রুপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলমান। যেটা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। একটা সময় একজন ক্রিকেটার তিন ফরমেটেই খেলতেন। এখন আলাদা আলাদা ইউনিট হচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররাও এখন টেস্ট খেলতে আগ্রহী হচ্ছে। যা বেশ ইতিবাচক। ক্রিকেট বোর্ডে যে পরিবর্তন এসেছে গত ৫ আগস্টের পর, সে সময় এমন জয় আমাদের ভাল কাজ করার আরো অনুপ্রেরনা যোগাবে। তিনি বলেন যদিও বলা হয়ে থাকে একটা সময় দল গঠনে হস্তক্ষেপ করা হতো, যা মোটেও কাম্য নয়। কারন এরকম হলে তা ক্রিকেটারদের উপর বাজে প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন বড় একটি ক্রান্তিকালে আমাদের নতুন সভাপতি হিসেবে যিনি দায়িত্ব নিয়েছেন সেই ফারুখ আহমেদ সরাসরিই বলে দিয়েছেন কোন বিষয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ তিনি করবেননা। যার যার দায়িত্ব যেন সংশ্লিষ্টরা পালন করেন সেটাই তিনি জানিয়েছেন তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে। তবে এ ধরনের ইতিহাস গড়া জয় সবার জন্য প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচকরা স্কোয়াড দেবে, টিম ম্যানেজম্যান্ট একাদশ সাজাবে। অধিনায়ক দল পরিচালনা করবে। সেটাই নিয়ম। আর সে নিয়মই এখন থেকে চলবে বোর্ডে। তবে টেস্ট ক্রিকেটে দল হিসেবে আমরা যে উন্নতি করছি সেটা চোখে পড়ছে পরিষ্কারভাবে। তিনি বলেন একটা সময় আমরা একজন পেসার নিয়ে খেলতাম। এখন আমরা তিনজন পেসার নিয়ে খেলছি। তারা দশটি উইকেট নিচ্ছে। তা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। সামনে আমাদের আরো কঠিন পরীক্ষা রয়েছে ভারতের বিপক্ষে। তবে এই জয় সে সিরিজেও অনুপ্রেরণা দেবে নিশ্চয়ই। আরেক পরিচালক মনজুর আলম মঞ্জু জানান এমন একটা জয়ের স্বপ্ন শুধু বিসিবি পরিচালক হিসেবে নয় একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবেও তার কাছে স্মরণীয়।

তিনি বলেন আমাদের ক্রিকেট দল পাকিস্তানে যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছে তা দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের জণ্য যেন শান্তির পরশ। আনন্দের উপলক্ষ্য। তিনি এই জয়ের পুরো কুতিত্ব দিতে চান দলের খেলোয়াড়দের। কোচ, কর্মকর্তা এবং কোচিং স্টাফদের। তাদের সম্মিলীত প্রচেষ্টার ফল এই ঐতিহাসিক জয়। এই জয় যে শুধু ক্রিকেটার কিংবা ক্রিকেট দল সংশ্লিষ্টরা অনুপ্রাণিত হবে বা আনন্দিত হবে তা কিন্তু না। এই জয় দোলা দিয়ে যাবে ক্রিকেট বোর্ডে যারা রয়েছে তাদেরও। এই সিরিজ জয়ের একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বোর্ডেও। তিনি বলেন আমরা যারা বোর্ডে কাজ করি বা বোর্ড পরিচালনা করি, তাদের জন্য এ ধরনের সাফল্য অনেক বড় প্রাপ্তি। তিনি আশা করেন এই জয়ের একটি প্রভাব যেন বোর্ডেও আসে। পাশাপাশি তিনি এই সাফল্যের জণ্য ক্রিকেটারদের বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা উচিত।

বোর্ড ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবেও ক্রিকেটারদের মূল্যায়ন করা যায়। দল গঠনে হস্তক্ষেপ বা নানা পর্যায়ে আগে যেসব অভিযোগ উঠতো সে প্রসঙ্গে মনজুর আলম বলেন আমি অতীতে ফিরে যাবনা। আমি সামনের দিকে দৃষ্টি দিতে চাই। আমরা চেষ্টা করব সামনের দিন গুলো কিভাবে সুন্দর এবং সাফল্যময় করা যায়। কখনোই কোন অযাচিত হস্তক্ষেপ কাম্য নয়। তবে মনজুর আলম মনে করেন এখন আমাদের যে নির্বাচক মন্ডলী রয়েছে এবং যারা কোচিং স্টাফে বা টিম ম্যানেজম্যান্টে রয়েছে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। আর সেটা পারছে বলেই এমন সাফল্য। তিনি বলেন একটা ইতিহাস রচনা করা আমাদের হয়ে গেছে। কিন্তু পরের সিরিজটা আমাদের জন্য আরো কঠিন। ভারতে গিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলতে হবে আমাদের। ভারত নিজেদের মাঠে আরো শক্তিশালী। আশা করছি পাকিস্তানের বিপক্ষে এই জয় ভারতেও ভাল করার অনুপ্রেরণা যোগাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। দলের এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে সে জন্য আমরা যারা বিসিবিতে আছি তারা সবাই নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর এ ধরনের সাফল্য আমাদের কাজের আরো গতি বাড়াবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিরিজ সেরার পুরস্কার গণ-আন্দোলনে নিহত রিকশাচালকের পরিবারকে প্রদান করবেন মিরাজ
পরবর্তী নিবন্ধপাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করায় ক্রীড়া উপদেষ্টার অভিনন্দন