নগরীর খুলশী এবং আকবরশাহ থানা এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা হচ্ছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী চক্র রাতের আঁধারে একের পর এক পাহাড় কাটছে। বায়েজিদ থানাধীন রউফাবাদ এলাকার একতা টাওয়ারের বাসিন্দা মাহমুদ (ছদ্মনাম) বলেন, এই এলাকায় এক সময় অনেক বড় বড় পাহাড় ছিল। মাত্র এক দশকে অনেকগুলো পাহাড়ের অস্তিত্ব নেই। আবাসিক হাউজিংয়ের নামে ওইসব পাহাড়ের স্থলে গড়ে উঠেছে বড় বড় বহুতল ভবন। এ যেমন ৮ নং সড়কের একমাত্র পাহাড় এটি। রাত হলেই একটু একটু করে খাবলে খাচ্ছে পাহাড়ের মাটি। তাদের থামানোর যেন কেউ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার প্রশ্রয়ে মো. কাশেম নামে এক ব্যক্তি রাতের আঁধারে সদলবলে পাহাড় কাটেন। সরেজমিনে দেখা মিলে এর সত্যতা। পাহাড়ের একটু দূরে রাখা হয়েছে মাটি কাটার এস্কেভেটর।
মো. কাশেমের ভাতিজা আজীজ আহমেদ দাবি করেন, লিজ শর্তে জায়গার মালিক তার চাচা মো. কাশেম। তাই সিডিএ থেকে অনুমতি নিয়ে কাটছেন এই পাহাড়। তবে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি। পাহাড়ের মালিক দাবি করা অভিযুক্ত মো. কাশেমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। আকবরশাহ থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে হরদম পাহাড় কাটা হচ্ছে। সাগরিকা প্রিন্টিং প্রেসের পেছনে, জঙ্গল লতিফপুর, মুরগির ফার্মের মীর আউলিয়া রোড, লইট্টাঘোনা, কোর্ট বিল্ডিং সমিতি এলাকা, হারবাতলী মা আমেনা মসজিদের পেছনে, শাপলা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে প্রতিদিন। স্থানীয় আমজাদ হোসেন, মাহফুজ, মোহাম্মদ জামাল, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, নুরউদ্দিন, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, লাল মহিউদ্দিন, খোকন, পুলিশ কালাম, মোহাম্মদ কামালসহ বিভিন্ন ব্যক্তি এলাকার পাহাড় কাটার সাথে সরাসরি জড়িত। এদের অনেকের বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অনেক অভিযোগ এবং মামলা থাকলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা ঠেকাতে পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন সোচ্চার থাকলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থাকে দায়ী করছেন তারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) চট্টগ্রামের সমন্বয়ক মনিরা পারভীন আজাদীকে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হচ্ছে। আদালতের রায় অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে আমরা শুধু মামলা করতে পারি। তবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর নিস্তব্ধতায় করুণ শিকার হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ।
পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত তাহরীম সৌরভ আজাদীকে বলেন, সাম্প্রতিক পট পরিবর্তনের কারণে পরিচালক, উপপরিচালক এবং ৪ পরিদর্শক বদলি হয়েছেন; যার কারণে স্থবির হয়ে আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত কার্যক্রম।
তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সিডিএর দফায় দফায় মিটিংয়ে পাহাড়, ডোবা ভরাট ও খননের বিষয়ে হাই কোর্টের আদেশের প্রেক্ষিতে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া অনুমতি না দেওয়ার বিষয় অবহিত করা হয়। তবে এই বিষয়ে সিডিএর কর্মকর্তারা কর্ণপাত করেননি বলে দাবি করেন তিনি।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, ইতিপূর্বে প্রশাসন মামলা ও জরিমানা করে পাহাড় কাটা রোধে চেষ্টা করে গেলেও তা কার্যকর নয়। পরিবেশের মামলায় বেশিরভাগই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়। এটিও পাহাড় কাটা বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ মনে করেন তারা। তাই নতুন করে এসব আইনের সংস্কার চায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো।