বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য, প্রাক্তন বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউ ইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী এনসিপি নেতা আখতার হোসেনকে ডিম ছোড়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এগুলোতে কিছু আসে–যায় না, এটা এমন বড় কিছু না।’ গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে বেসরকারি মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ১৪তম ব্যাচের ইন্টার্ন সমাপ্তি ও এমবিবিএস সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। নিউ ইয়র্কের ঘটনায় সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিকভাবে পরাস্ত হয়ে পালিয়ে গিয়ে এখন এ সমস্ত কাজ ছাড়া আর কি করবে, এটাই তো করবে। এর বাইরে তো আর কিছু করার নেই। আপনি যখন পরাজিত হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেলেন, উনাদের সমর্থকদের তো এ ধরনের কাজের বাইরে আর কিছু করার নেই আপাতত। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, দেশ ধ্বংস করে পালিয়ে গিয়ে এখন যেগুলো করছে, এগুলো তো আরও ধ্বংসাত্মক। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এগুলো তাদের (আওয়ামী লীগ) ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে দিচ্ছে।
নিরাপত্তা নিয়ে দূতাবাসের গাফেলতি ছিল কী না এমন প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, নিরাপত্তা তো দূতাবাসের বিষয় না। সেটা তো সেদেশের বিষয়। দূতাবাসের ইন্টেলিজেন্স টিম যারা আছে, তাদের হয়তো এটা জানা উচিৎ ছিল। অ্যানিওয়ে এগুলোতে কিছু আসে–যায় না। একটা গণতান্ত্রিক দেশে অনেক কিছুই হতে পারে। এটা আমাদের জন্য এমন বড় কিছু না। গণতান্ত্রিক সব দেশে এগুলো হয়ে থাকে। যার সমর্থন আছে সেও করতে পারে, যার সমর্থন নেই, সেও করতে পারে। এ কাজ করতে তো খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ গভর্নিং বডির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের জন্য গবেষণামূলক কাজে অবদান রাখার জন্য চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামী দিনে মা ও শিশু হাসপাতালকে ইউনিভার্সিটিতে রূপান্তর করে স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি বিস্তৃত করা হবে। সরকার, প্রাইভেট সেক্টর, এনজিওসহ সবার সমন্বয়ে আগামী দিনের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, বিদেশে গিয়ে যে পরিমাণ রোগী বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নেন, সেটা বন্ধ করতে চাই। যেদিন বন্ধ হবে সেদিন সফলতার উদাহরণ সামনে আসবে। যারা নতুন ডাক্তার হয়েছেন, তাদের এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে চিকিৎসকদের অগ্রনি ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশের প্রতিটি ঘরে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়া ও সবার জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার বিএনপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও তুলে ধরেন এবং বিএনপির এই লক্ষ্য অর্জনে সকলের সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, বিএনপি দেশের প্রতিটি ঘরে সুচিকিৎসা পৌঁছে দিতে চায়। এই লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি কাজ করছে। তিনি দেশের মানুষের মানসম্মত সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনে যাদের অবদান রয়েছে তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল তা অর্জিত হয়েছে। সর্বোচ্চ মানদন্ড বজায় রেখে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া ছাত্র–ছাত্রীদের দেখে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বলে উল্লেখ করে বলেন, এই মেডিকেল কলেজের উন্নয়নের জন্য প্রাক্তন ছাত্র–ছাত্রীদের সমন্বয়ে এলামনাই এসোসিয়েশন গঠন করলে পারস্পরিক সহযোগিতায় চিকিৎসা কার্যক্রমের উন্নতি ঘটবে। তিনি অতীতের মতো সামনের দিনগুলোতেও চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পাশে থাকবেন বলে সকলকে আশ্বস্ত করেন। অনুষ্ঠানে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ১১২ জন ইন্টার্নী চিকিৎসকের হাতে ইন্টার্নী সমাপনী সার্টিফিকেট তুলে দেন।
হাসপাতালের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেনের সভাপতিত্বে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের পরিচালক (মেডিকেল এ্যাফেয়ার্স) ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ কে এম আশরাফুল করিম। অনুষ্ঠানে কার্যনির্বাহী কমিটির জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদ, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, ট্রেজারার অধ্যক্ষ লায়ন ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তানভীর, মোহাম্মদ সাইফুল আলম, ডা. মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন ঢালী, ডা. মোহাম্মদ সারোয়ার আলম, মোহাম্মদ আবুল হাশেম, চমাশিহা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন উপদেষ্টা, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ও পরিচালক (ল্যাব মেডিসিন) প্রফেসর এ এস এম মোস্তাক আহমেদ, ইন্টার্ন অভিভাবকদের পক্ষ থেকে সৈয়দ জাহিদ হোসেইন চৌধুরী ও ডা. দিলশান আরা হাবিব এবং ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডা. অদিতি মজুমদার তুষ্টি, ডা. মিনহাজুল আবেদিন রবিন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কার্যনির্বাহী কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (ডোনার) ডা. কামরুন নাহার দস্তগীর, ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান রানা, অর্গানাইজিং সেক্রেটারি মোহাম্মদ সাগির, স্পোর্টস এন্ড কালচারাল সেক্রেটারি ডা. ফজল করিম বাবুল, ডোনার মেম্বার মোহাম্মদ হারুন ইউসুফ, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসীম কুমার বড়ুয়া, উপ–পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন, উপ–পরিচালক (প্রশাসন, আইসিএইচ) ডা. মোহাম্মদ আবু সৈয়দ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. লাবিবা ওয়াজিহা ও ডা. সুমাইয়া রহমান।