আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ডাকসুতে জয় পেয়েছে শিবির

আবদুল্লাহ আল নোমান এর শোকসভায় মির্জা আব্বাস বিএনপির বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৭ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আঁতাত হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি মনে করেন, এই আঁতাতএর কারণে ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ভোট পেয়েছে ছাত্র শিবির। তিনি বলেন, ডাকসু ইলেকশনে বিএনপি হেরে গেছে, এটা আপনারা বলতে পারেন। কিন্তু আমি বলতে পারি না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর এত ভোট কোত্থেকে আসল। আমার তো হিসেবে মিলে না। আমি বলতে চাই না, জামায়াত কারচুপি করেছে। আমি বলতে চাই, দেশে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছি আমি। কারণ আমরা যখন বিভিন্ন দল একসঙ্গে বসি, তখন জামায়াত ইসলামের নেতারা বারবার আমাদেরকে কী বলে জানেন? বলেন– ‘ভাই খেয়াল রাখবেন আওয়ামী লীগ যাতে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে না পারে, আওয়ামী লীগ ঠেকান সবসময়, আওয়ামী লীগ আসলে সবাইকে কচুকাটা করবে’; এটা তাদের (জামায়াতে ইসলাম) ডায়ালগ। আমরা সেভাবেই চললাম। আর তলে তলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে ছাত্রলীগের সকল ভোট জামায়াত নিয়ে নিল। এখন বুঝতে পেরেছেন?

তিনি গতকাল বুধবার বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এর শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নগরের দি কিং অব চিটাগাং মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত শোক সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও শোকসভা প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। ‘মরহুম আবদুল্লাহ আল নোমান শোক সভা প্রস্তুতি কমিটি’র উদ্যোগে আয়োজিত শোকসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহতথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সুশীল বড়ুয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে ও জাতীয়তাবাদী পাট শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাঈদ আল নোমান, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর নছরুল কদির, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ড. সিদ্দিক আহমদ চৌধুরী ও বিএনপি নেতা একরামুল করিম।

আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মৃতিচারণ করে মির্জা আব্বাস বলেন, নোমান ভাইয়ের মতো একজন ভালো রাজনৈতিক সহকর্মী পাওয়া খুব ডিফিকাল্ট। এমন একজন রাজনৈতিক সহকর্মী পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। অসুস্থ শরীর নিয়েও নোমান ভাই হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে কখনো পিছপা হননি। আমরা গণঅভ্যুত্থান করে হাসিনাকে উৎখাত করেছি। আজ নোমান ভাই সঙ্গে থাকলে আমাদের আরও ভালো লাগতো। নোমান ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

মির্জা আবাস বলেন, ডাকসু ইলেকশন থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। এই নির্বাচন দুটো কাজে এসেছে। ২০০৮ সালের মত ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ছাত্রলীগের ভোট। এসময় তিনি বলেন, যাই হোক, যেভাবেই হোক ডাকসু ইলেকশনে ওরা পাশ করেছে। এই কমিটিকে আজকে সভা থেকে আমি স্বাগত জানাতে চাই। আমি আশা করব, এই কমিটি যেন দেশের স্বাধীনতা সর্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য চেষ্টা করে এবং তাদের যে সিনিয়র নেতারা ভুল পথে দেশটাকে পরিচালনার চেষ্টা করছে সেখান থেকে তারা যেন তাদেরকে রক্ষা করে।

মির্জা আব্বাস বলেন, এরা কত বড় মোনাফেকের দল একটু দেখেন। বেগম জিয়া ২০০৮ সালের নির্বাচনে যেতে চাননি। কিন্তু মুজাহিদ সাহেব (আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ) জোর করে নির্বাচনে নিয়ে গেলেন। তার ফল কী হল? জামায়াত ইসলামের চার থেকে পাঁচজন লোকের ফাঁসি হলো। আমাদের কাছ থেকে চলে গেল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, বহুদিন জেল খেটেছি। জেলখানায় একপর্যায়ে নিজামী (মতিউর রহমান নিজামী) মুজাহিদ সাহেব, ডা. আবু তাহের, যাদের ফাঁসি হয়েছে, এরা কিন্তু সকলেই আমার সঙ্গে ছিলেন। জেলখানায় একসঙ্গেই ছিলাম। আমি একদিন নিজামী সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, নিজামী সাহেবের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, জামায়াতের মধ্যে বোধহয় আর নেতা আসবে না এমন, উনি একমাত্র লোক, সত্যিকার অর্থেই একজন জ্ঞানী লোক ছিলেন। উনাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, হুজুর, আপনি নির্বাচনে কেন গেলেন বলেন তো? নিজে তো গেলেন, আমাদেরও নিয়ে গেলেন, মারলেন তো আমাদেরও। উনি বললেনআমি ভাই এ বিষয়ে কিছুই বলবো না। উনি (নিজামী) নীরব থাকলেন, পাশে ছিলেন মুজাহিদ সাহেব। উনার সঙ্গে আমার বয়সের তফাৎ ছিল না। আমি বললামমুজাহিদ সাহেব আপনি বলেন, কেন নির্বাচনে গেলেন? উনি বললেন, আপনি বুঝবেন না কেন গেছি। দুর্ভাগ্য, ওই নির্বাচন কিন্তু ওনাদেরকে ফাঁসির দিকে নিয়ে গেল। ওনাদের পাঁচছয়জন লোকের ফাঁসি হলো, তারপরও দেখেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের প্রেম কিন্তু ছুটে না। এখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আছে। এই নির্বাচনেও (ডাকসু) ভারতে বসে বসে তারা ইনস্ট্রাকশন দিয়েছে, জামায়াতকে ভোট দিতে হবে।

মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করলে পরে আর কোনো সমস্যা থাকে না জামায়াত ইসলামের। আওয়ামী লীগ বাইরে থেকে বসে জামায়াতকে বলবে, এই মৌলবাদীরা সব দেশে আছে, সুতরাং এই দেশটাকে দখল করতে হবে। এরকম চিন্তাভাবনা আওয়ামী লীগের ভিতরে আছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না দেশটা কোন দিকে যাচ্ছে।

মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে দেশে এবং দেশের বাইরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশে বিএনপি একটি মাত্র দল, যেই দলের হাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ও মানুষের জানমাল নিরাপদ। আপনি বলতে পারেন, ৫ আগস্টের পর বিএনপির লোকেরা অনেক অত্যাচার করেছে। কথাটা সঠিক নয়। বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ মিশে অপকর্ম করছে, আবার জামায়াতের সঙ্গে মিলে আওয়ামী লীগ অপকর্ম করছে। কিন্তু সমস্ত দোষ বিএনপির উপরে আসছে। আর বিএনপির ছেলেরা কিছুই বুঝে না? তা আমি বলব না, বুঝে। তারা এই লোভ হয়তো বা সামাল দিতে পারে নাই।

মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী, কোনো চাঁদাবাজ ও কোনো দখলদারের জায়গা হবে না। এখনো যদি কেউ সামাল না দেন, এখনো যদি নিজেকে নিজে ঠিক না করেন আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, মনে রাখতে হবে বিএনপি স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়া রহমানের দল। বিএনপি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দল। সুতরাং এখানে চাঁদাবাজের ও দখলদারের কোনো জায়গা নেই। মঞ্চে দাঁড়িয়ে কিন্তু দখলদাররা বক্তৃতা দেয়, দখলদারি করা যাবে না। বুঝতে পারছেন? মঞ্চে দাঁড়িয়ে দখলদার ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলে আর বাইরে গিয়ে অপকর্মটা শুরু করে। আমরা এই ধরনের লোকগুলোকে কিন্তু চিনি এবং জানি। সুতরাং সাবধান হয়ে যাবেন। যারা চাঁদাবাজি করছে তারা বিএনপির লোক না।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমাান আমার নেতা ছিলেন। আমি মনে করি চট্টগ্রামের সব নেতাদের উনি নেতা ছিলেন। তার মতো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন আপোষহীন নেতার আজ দরকার ছিল আমাদের। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ শক্তি হিসেবে থাকলে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আমরা যদি একজন আরেকজনের পিছনে বিদ্বেষ ছড়াই তাহলে আমাদের এই ইতিহাস থেকে আমরা হারিয়ে যাব।

সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান নেতাকর্মীদের নিজের সন্তানের মত মনে করতেন। কখনো তাদের ব্যবহার করতেন না। চট্টগ্রামের অবকাঠামোসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতের বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে আবদুল্লাহ নোমানের হাত ধরে।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, মানবতা ও ন্যায়ের মূর্ত প্রতীক ছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। দলের প্রতি ছিল তার আনুগত্য। তিনি ছিলেন সত্যিকারের রাজীতিবিদ।

শোকসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পেশাজীবী নেতা জাহিদুল করিম কচি, বিএনপি নেতা এম এ হালিম, অধ্যাপক মো. ইউনূস চৌধুরী, মো. সালাহ উদ্দিন, সেলিম চেয়ারম্যান, আবদুল আওয়াল চৌধুরী, অধ্যাপক জসীম উদ্দিন চৌধুরী, আবু আহমেদ হাসনাত, শহীদুল ইসলাম, হাসান মোহাম্মদ জসীম, এস এম মুরাদ চৌধুরী, মো. সারোয়ার ও সারোয়ার হোসেন রুবেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডাকসুর বিজয়ীদের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানালেন সালাহউদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের এশিয়া কাপ শুরু আজ