আওয়ামী লীগের ফারুক চৌধুরী আবারও চেয়ারম্যান

কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার দায়ে তিনজনকে আটক কে কত ভোট পেলেন?

পটিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৩০ পূর্বাহ্ণ

কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ২১ হাজার ২০। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ১৯ হাজার ৯৮৮ ভোট। ফলে ১ হাজার ৩২ ভোটের ব্যবধানে টানা দ্বিতীয় বারের মতো কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী। গতকাল বুধবার রাত ৮টায় উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বেসরকারি ফলাফলে ফারুক চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুস শুক্কুর। এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৫ ইউনিয়নের ৪৫টি কেন্দ্রে ইভিএমে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া : কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার ৫ ইউনিয়নে ৪৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে ভোট গ্রহণ হয় ইভিএমে। কয়েকটি কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ভোটাররা উৎসবমুখর পরিবেশে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এবার ভোটে ভোটারের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
এদিকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চরলক্ষ্যা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরের নৌকা ও আনারস প্রতীক সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় ককটেল ফাটানোর ঘটনা ঘটলেও দ্রুত ম্যজিস্ট্রেট ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার বড় উঠান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও আনারস সমর্থকদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত হয়েছেন মহিউদ্দিন, নয়ন, ফারুক চৌধুরী, খোকন, এহসান ও মাসুম। তাদের মধ্যে মহিউদ্দিন ও নয়নকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও বড় উঠান ইউনিয়নের বিভিন্ন কেন্দ্রে আনারস প্রার্থীর এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ আলী।
এদিকে ভোটকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পরে জরিমানা আদায় করে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড ভোটকেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- কর্ণফুলী উপজেলার দৌলতপুরের আমিনুল হকের ছেলে মো. মোরশেদুল ইসলাম, শাহ মীরপুর এলাকার রাজ্জাকপাড়ার আবু তাহেরের ছেলে মো. কাওসার এবং শিকলবাহা ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত শাহ আলমের ছেলে সালাউদ্দিন মণ্ডল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার দক্ষিণ শিকলবাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম চার ঘণ্টায় ভোট পড়ে মাত্র ৮ শতাংশ। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ করতে কঠোর অবস্থানে ছিল নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন। কেন্দ্রে মোতায়েন ছিল বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য। বেলা ১২টায় শিকলবাহা ইউনিয়নের দক্ষিণ শিকলবাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের উপস্থিতি একেবারে হাতে গোনা।
কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এনামুল করিম বলেন, দুপুর পর্যন্ত আশানুযায়ী ভোট কাস্ট হয়নি। বেলা ১টা পর্যন্ত এ কেন্দ্রে ২৬৫৯ ভোটের মধ্যে ভোট পড়েছে ২০০টি। পশ্চিম শিকলবাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৯১৩ ভোটের মধ্যে পড়েছে ১৯৬টি। একই সময়ে উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের মাওলানা আলী শাহ নুরানী মাদ্রাসা কেন্দ্রে ২৫৬১ ভোটের মধ্যে পড়েছে মাত্র ২৪০টি।
চট্টগ্রাম জেলার সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
ভাইস-চেয়ারম্যান পদে কে কত ভোট ভোট পেলেন : ভাইস চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির আহমদ। ১ হাজার ২২১ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হওয়া আমির আহমদ পেয়েছেন ১৮ হাজার ২৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী উড়োজাহাজ প্রতীকের প্রার্থী মহিউদ্দীন মুরাদ পেয়েছেন ১৭ হাজার ১৩ ভোট। তালা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অপর প্রার্থী আবদুল হালিম পান ৫ হাজার ৭৯৫ ভোট।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ফুটবল প্রতীকের প্রার্থী ডা. ফারহানা মমতাজ ১৪ হাজার ২৮৪ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। তিনি পেয়েছেন ৩৫ হাজার ১৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাস প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম নিশি পেয়েছেন ২ হাজার ৯শ ভোট, তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কলসী প্রতীক নিয়ে লড়া আওয়ামী লীগ প্যানেলের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মোমেনা আকতার নয়ন। তিনি পেয়েছেন ২ হাজার ৫৩৫ ভোট, চতুর্থ স্থানে রয়েছে বৈদ্যুতিক পাখা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা রানু আকতার। তার প্রাপ্ত ভোট ৩৯৫ ভোট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৌকার প্রার্থী ইছমাইলের হ্যাটট্রিক জয়
পরবর্তী নিবন্ধপুকুর চুরি-পুকুর রক্ষা