মার্চে প্রথম ধাপে ফটিকছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এবার ফটিকছড়িতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদসহ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসতে পারে নতুন মুখ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন হোসাইন মো. আবু তৈয়ব। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, তৈয়ব এবার নির্বাচন করবেন না। এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে ফটিকছড়িতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না–এ সিদ্ধান্তে এখনো তারা অটল। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে চেয়ারম্যান পদে দলীয় সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। চলছে লবিং। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ধর্না দিচ্ছেন স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। ফটিকছড়িতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন মুহুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদাত আনোয়ার সাদী, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ বাকের ও উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল বশর। এছাড়া যারা প্রার্থী হতে পারেন তারা হলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালামত উল্লাহ চৌধুরী শাহীন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট উত্তম কুমার মহাজন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক না থাকলে একাধিক প্রার্থী থাকতে পারেন। এতে করে লড়াইটাও জমতে পারে।
তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কারো নাম এখনো পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে না। গুঞ্জন আছে, চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন না পেলে কেউ কেউ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আসতে পারেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন নির্দলীয় হওয়ায় তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। ভেতরে ভেতরে অনেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হলেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী রাজিয়া মাসুদ ও শারমিন নুপুর।
এদিকে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার ঘোষণা আসার সম্ভাবনা থাকায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে ভোটে জেতার নিশ্চয়তা বলে মনে করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সেভাবেই তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন।
গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন মুহুরী। সেইবার তিনি স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হোসাইন মো. আবু তৈয়বের কাছে পরাজিত হন। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনেও দলীয়ভাবে গুরুত্ব পাচ্ছেন তিনি। নাজিমুদ্দিন মুহুরী বলেন, গতবার আমার ওপর অবিচার হয়েছে। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় আশা করি আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হব। আমি স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করব না। আমার ক্ষমতার দরকার নেই, দলের আনুগত্য দরকার।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাদাত আনোয়ার সাদী বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার সকল ভালো কাজের সাথে জড়িত আছি। রাস্তাঘাটের উন্নয়নে কাজ করেছি। করোনার সময় ফটিকছড়িতে কোভিড হাসপাতালে ১৭ লক্ষ টাকা মানুষের জন্য দিয়েছি। ফটিকছড়ির বৃদ্ধাশ্রমের যে ব্রিজটি সেটা আমি টেন্ডার করে এনেছি। আমি চাই এলাকার সকল স্তরের মানুষের জন্য কাজ করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি কোনো দায়িত্ব দেন সেটা পালন করতে প্রস্তুত আছি।
আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ বাকের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা দলের পরীক্ষিত কর্মী। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করার মতো দক্ষতা আমার আছে। আমার রাজনীতির বয়স ৩৭ বছর। আমাদের থেকে অনেক কম বয়সী মানুষ জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতিনিধিত্ব করছেন। এক্ষেত্রে আমার চাওয়ার মতো প্রায়োরিটি আছে। দলের সবাই সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর যদি আমাকে মনোনীত করেন আমি নির্বাচন করব। দলের বাইরে গিয়ে কিছু করব না।
উত্তর জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবুল বশর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চান। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবায় জড়িত। সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট কাজেও জড়িত আছি। মানুষের সেবার পরিধি বাড়াতে এবং উপজেলা জুড়ে বর্তমান সরকারের চলমান উন্নয়নের সারথি হতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বিশ্বাস, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন।
এদিকে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরোয়ার আলমগীর বলেন, বিএনপির নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না। কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
সুযোগ পেলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রাহা। তিনি বলেন, দল করতে গিয়ে জেল–জুলুমের শিকার হয়েছি। এত ত্যাগের পরও কেন কিছু পেতে পারি না?
এছাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টি নেতা মোহাম্মদ আবছার উদ্দিন চৌধুরী চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে পারেন। তিনি আজাদীকে বলেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করব।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার অরুন উদয় ত্রিপুরা বলেন, ফটিকছড়িতে প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।