দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পেয়েছে সরকার গঠনের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। গত রাত আড়াইটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৯৯ আসনের মধ্যে ২৮২ আসনের ফল বেসরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১৯টি আসনে জয় পেয়েছে। জাতীয় পার্টি জিতেছে ১১টি আসনে। স্বতন্ত্র পেয়েছে ৫১ আসন। অন্যান্য পেয়েছে ১টি আসন। প্রসঙ্গত, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে গতকাল ২৯৯ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। সরকার গঠনে প্রয়োজন ১৫১টি আসন।
গোপালগঞ্জ–৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা প্রতীকে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মনোনীত প্রার্থী এম নিজাম উদ্দীন লস্কর একতারা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৬৯।
কম ভোটার, শান্তিপূর্ণ ভোট : তুলনামূলক কম ভোটারের উপস্থিতি, কয়েকটি আসনে গোলযোগ আর অনিয়মের অভিযোগের মধ্যে মোটা দাগে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বিএনপির বর্জন আর হরতালের মধ্যে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ চলে। এরপরও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা কেন্দ্রের ভেতরে লাইনে অপেক্ষমাণ ছিলেন, তাদের ভোট নিয়েছেন প্রিসাইডিং অফিসার।
ভোটের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, গুরুতর সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ছিল। ভোটের হার ৪০ শতাংশের মতো বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়ে বলেন, আজকে নির্বাচনটা যে আমরা সুষ্ঠুভাবে করতে পারছি, সে জন্য আমি আমার দেশের মানুষের প্রতি, দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। মানুষ তার ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, অনেক বাধা ছিল, অনেক বিপত্তি ছিল, কিন্তু দেশের মানুষ তাদের ভোটের প্রতি যে সচেতন হয়েছে, নির্বাচনটা যে জরুরি, কারণ পাঁচ বছর পর আরেকটা নতুন সরকার আসবে। জনগণ তার ইচ্ছামতো ভোট দেবে, সেই ভোট দেবার পরিবেশটা আমরা তৈরি করেছি। তবে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, আমাদেরকে ভোটে নিয়ে এসে কুরবানি দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা চালু করা হয় কিনা সেটা নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
১৪ দলের শরিকরা জয় পেল দুই আসনে : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরা যে ছয়টি আসনে ছাড় পেয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট করেছে, তার চারটিতেই জয়ের মুখ দেখতে পায়নি তারা। কেবল রাশেদ খান মেনন আর রেজাউল করিম তানসেন জয়ী হয়েছেন।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন গত তিনবার ঢাকা–৮ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন। এবার তাকে আওয়ামী লীগ ছাড় দেয় বরিশাল–২ আসনে, সেখানে প্রায় ৯০ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়ী হয়েছেন।
ভেভিওয়েট অনেকে হেরেছেন : নৌকা নিয়ে হেরে যাওয়ার তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী দুইবারের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী দুই বারের সংসদ সদস্য এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী তিনবারের সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য।
এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করে হেরে যান।
হেরে গেছেন বেশ কয়েকজন আলোচিত প্রার্থী। এই প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিকল্প ধারার যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার উল্লেখযোগ্য।
সাবেক মন্ত্রী ও বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী জয় পেলেও তার ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকী হরেছেন। এছাড়া ঢাকা–১৮ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের কেটলি মার্কার প্রার্থী ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. খসরু চৌধুরী সিআইপির কাছে হেরেছেন।