আইরিশদের হোয়াইটওয়াশ করে রেকর্ডময় সিরিজ জয় বাংলাদেশের

পূর্ণ হলো ৬ পয়েন্ট অর্জনের লক্ষ্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ১০:০৮ পূর্বাহ্ণ

তৃতীয় ওয়ানডেতে অনায়াস জয়ে রেকর্ডময় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গতকাল সোমবার মিরপুর শেরই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে ৭ উইকেটে আয়ারল্যান্ডকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। ১৮৬ রানের লক্ষ্য ৭৫ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে নিগার সুলতানার দল। প্রথমে ব্যাট করা আয়ারল্যান্ড নির্ধারিত ৫০ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান সংগ্রহ করে। জবাবে বাংলাদেশ ৩৭.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান তুলে নেয়।

গতকাল সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আরেকটি চমৎকার ইনিংস খেলেন শারমিন আক্তার। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে টানা তৃতীয় ইনিংসে পঞ্চাশ ছাড়ালেন ফারজানা আক্তার। তাদের রেকর্ডগড়া জুটিতে সহজ জয়ে আয়ারল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। ভারতে আগামী বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার আশা জিইয়ে রাখতে এই সিরিজে পূর্ণ ছয় পয়েন্ট জরুরি ছিল বাংলাদেশের জন্য। তিন ম্যাচেই দাপুটে জয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করেছে তারা। এ নিয়ে তৃতীয়বার কোনো দলকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে সব ম্যাচ জয়ের নজির এটিই প্রথম। এই সাফল্যের বড় কারিগর দলে ফেরা শারমিন। প্রায় দেড় বছর পর দলে ফিরে প্রথম ম্যাচে ৯৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। গতকাল সোমবার ৮৮ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে আবার তিনি ম্যাচের সেরার স্বীকৃতি পান। নিজেকে নতুনভাবে মেলে ধরার এই সিরিজে তিন ম্যাচে শারমিনের সংগ্রহ ৭০.৩৩ গড়ে ২১১ রান। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার এক সিরিজে দুইশর বেশি রান করেন। গত বছর ভারতের বিপক্ষে ১৮১ রান করে রেকর্ডটি এতদিন ছিল ফারজানা হকের। অভিজ্ঞ ব্যাটার এই সিরিজেও ছিলেন যথারীতি উজ্জ্বল। তিন ম্যাচেই ফিফটি করা ওপেনারের রান এই সিরিজে মোট ১৭২। এই প্রথম এক সিরিজে তিনটি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের কোনো ব্যাটার। প্রথম ম্যাচে ১০৪ রানের জুটি গড়া ফারজানা ও শারমিন এবার যোগ করেন ১৪৩ রান। যে কোনো উইকেটেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ এটি। সব মিলিয়ে এই সিরিজে মোট ৬টি পঞ্চাশছোঁয়া জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। এটিও রেকর্ড। গত বছর ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচে ৫টি পঞ্চাশছোঁয়া জুটি গড়েছিল তারা।

মিরপুর শেরবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে আরেকবার ব্যাটিং নেন আইরিশ অধিনায়ক গ্যাবি লুইস। দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়ে ২০৩০ রান বেশি করার লক্ষ্যের কথা বলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের স্পিন পরীক্ষায় নাকাল হয়ে আগের চেয়ে উল্টো কম রানে গুটিয়ে যান তারা। মন্থর শুরুর পর ষষ্ঠ ওভারে সুলতানা খাতুনের নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে আনেন সারাহ ফোর্বস। স্কোরবোর্ডে তখন মাত্র ৯ রান। শুরুর ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন লুইস ও এমি হান্টার। তবে রানের গতি বাড়াতে সফল হননি তারা। ৪৮ রানের জুটি গড়তে দুজন মিলে খেলেন ৮১ বল। ৪০ বলে ২৩ রান করা হান্টারকে এলবিডব্লিউ করেন রাবেয়া। ২৬তম ওভারে থার্ড ম্যানে লুইসের একটি বাউন্ডারি ঠেকানোর চেষ্টায় ঘাড় ও মাথায় আঘাত পান মারুফা। পরে আর মাঠে ফিরতে পারেননি দলের একমাত্র পেসার। কনকাশন বদলি হিসেবে নামানো হয় পেস অলরাউন্ডার রিতু মনিকে। রিপ্লে না দেখেই সেটি বাউন্ডারি দিয়ে দেন মাঠের আম্পায়ার। রিপ্লেতে দেখা যায়, সীমানা দড়ি ছোঁয়ার আগেই বল ফিরিয়েছেন মারুফা। তবে সিদ্ধান্ত বদলানো হয়নি। ওই চারে ৭৬ বলে ফিফটি পূর্ণ হয় আইরিশ অধিনায়কের। এরপর টিকতে পারেননি তিনি। দলের একশ হওয়ার আগে ফাহিমার বলে বোল্ড হন ৯ চারে ৭৯ বলে ৫২ রান করা লুইস। পরে আর কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি আইরিশদের। ওর্লা প্রেন্ডারগাস্ট ৪৫ বলে ২ চারে করেন ২৭ রান। এছাড়া আর্লিন কেলি, অ্যালানা ডালজেল ও ক্যারা মারের ছোট ছোট ইনিংসে দুইশর কাছে যায় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন ফাহিমা। সুলতানা ও নাহিদার ঝুলিতে জমা পড়ে ২টি করে উইকেট। ১টি করে উইকেট পান রাবেয়া এবং স্বর্ণা।

রান তাড়ায় শুরুতেই হতাশ করেন মুর্শিদা খাতুন। প্রেন্ডারগাস্টের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। শুরুর আনন্দ বেশিক্ষণ টেকেনি আয়ারল্যান্ডের। দ্বিতীয় উইকেটে আরেকবার বড় জুটি গড়ে তোলেন ফারজানা ও শারমিন। বরাবরের মতোই রয়েসয়ে ব্যাটিং করতে থাকেন ফারজানা। আর শারমিন ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন দারুণ ছন্দে থাকা শারমিন। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে স্লগ করে লং অন দিয়ে মারেন চার। পরের ওভারে ফ্রি হিট পেয়ে চমৎকার অফ ড্রাইভে আরেকটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। ১২তম ওভারে পঞ্চাশ করে ফেলে বাংলাদেশ। যেখানে শারমিনের অবদান ২৫ বলে ২৮ রান। এরপর একই ছন্দে এগোতে থাকেন ২৮ বছর বয়সী ব্যাটার। থার্ড ম্যান দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি ৫৮ বলে। পরে অ্যামি ম্যাগুয়েইরের বলে পরপর দুই চার মেরে ৮৯ বলে ফিফটি করেন ফারজানা। তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ত্রয়োদশ ফিফটি এটি। ৩৩তম ওভারে ম্যাগুয়েইরের প্রথম বলে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান ৫৩ রানে থাকা ফারজানা। এক বল পরই ফ্রেয়া সারজেন্টের ক্যাচে বিদায়ঘণ্টা বাজে শারমিনের। তিন ম্যাচে দ্বিতীয় পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসে ১১টি চার মারেন শারমিন। সব মিলিয়ে সিরিজে তার বাউন্ডারি ২৯টি। বাংলাদেশের পক্ষে এক সিরিজে সর্বোচ্চ বাউন্ডারির আগের রেকর্ড ছিল ফারজানার, গত বছর ভারতের বিপক্ষে ১৭টি। শারমিনের বিদায়ে ভাঙে ১৪৩ রানের জুটি। চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচেও শতরানের জুটি গড়েছিলেন শারমিন ও ফারজানা। এই প্রথম এক সিরিজে একাধিক শতরানের জুটি পায় বাংলাদেশ। ফারজানাও অবশ্য ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। ৬ চারের ইনিংস খেলে ম্যাগুয়েইরের বলে আউট হয়ে যান তিনি। বাকি পথটুকু পাড়ি দেন নিগার ও সোবহানা মোস্তারি। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ এবং প্লেয়ার অব দা সিরিজ হয়েছেন যথাক্রমে শারমিন আক্তার এবং ফারজানা হক। দুই দল এখন খেলবে তিন ম্যাচের টিটোয়েন্টি সিরিজ। সিলেটে ম্যাচ তিনটি হবে আগামী বৃহস্পতিবার, শনিবার ও সোমবার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপূর্বে নেওয়া এমসিকিউ টাইপ লিখিত পরীক্ষা বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধস্বামীর কাপড় বুকে জড়িয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের আহাজারি