আইয়ুন, বানভাসি মাইনষেরলাই ভালোবাসার হাত বাড়াই

রশীদ এনাম | সোমবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনে জন্যে, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না? ও বন্ধু মানুষ মানুষের জন্যেশিল্পী ভূপেন হাজারিকার গানের চরণটি খুব মনে পড়ছে। জুলাইআগস্টজুড়ে যেন দেশে একে পর এক বড় অসুখ। একমাত্র বিধাতাই ভালো জানে এ অসুখ সারবে কবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয়াবহ বন্যায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে দেশের মানুষ। বন্যার জলে ভাসছে বেশকিছু জেলা। অর্ধকোটি মানুষ পানি বন্দী বানের পানিতে যেন ধুসর শহর চারিদিকে পানি আর পানি কিন্তু পান করার মতো নেই এক ফোটা পানি। মৃত্যুর মিছিলে হাঁটছে, শিশু নারী, তরুণবৃদ্ধ। শান্তির পায়রা আজ মনিবের কথা শুনে না চক্রাকারে যেন উড়ছে আর উড়ছে। সবকিছু যেন এবরো থেবরো। দেশের মানুষ এমনিতে ট্রমায় তার মধ্যে বন্যা যেন গোদের উপর যেন বিষফোঁড়া। মানুষের মায়া, মমতা মানবিকতা, ভালোবাসার শেষ পেড়েকটুকু যেন কফিন বাক্সে বন্দী। কিছু মানুষের পাপ যেন গর্ভবতী হওয়ার মতো। গত কয়েকদিন অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে দেশের প্রায় ১২/১৩ টি জেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোটি মানুষ। চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী ছোট একটি জেলা ছবির মতো ৬টি থানা নিয়ে গঠিত। চোখের পলকে যেন বানের পানিতে তলিয়ে গেছে আহা মানুষের আহাজারি। ঢাকা চট্টগ্রামের সাথে সড়ক ও রেলযোগাযোগ গত বৃহস্পতিবারশুক্রবার বিচ্ছিন্ন ছিল। সড়কের উপর সারি সারি বাসপণ্যবাহি ট্রাক ও প্রাইভেট গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বন্যার কোনো পূর্বাবাসও ছিল না। ভাদ্রমাসের শুরুতে হঠাৎ অতিবৃষ্টি উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল এবং ভারতে ত্রিপুরা রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি অবনিত হওয়ায় ত্রিপুরার ধলাই জেলার জলাধার ডুম্বুরের অস্বাভাবাকি পানির চাপ থাকায় স্ন্যাপ গেট খুলে দেওয়ায় ফেনী জেলায় পানিতে টইটম্বুর হয়ে যায়। পাশাপাশি কুশিয়ারা, মনু, ধলাই, খোয়াই, মুহুরী, ফেনী ও হালদা নদীর পানি হঠাৎ করে বেড়ে যায়। পানির স্রোতে অনেক নদীর বাঁধ ছিড়ে রাস্তা, সেতু, ফসলী জমি, গরুমহিষ, হাসমুরগী ও মাছের খামার বানের পানিতে ভেসে গেছে। ফেনীর খুব কাছের বন্ধু, জিয়া, হাসান, কাউছার মুঠোফোনে জানিয়েছিল, তাঁদের এলাকায় ১তলা বাড়িতে পানি ওঠে ২ তলা ছুঁই ছুঁই করছে। হাজার হাজার মানুষ পানি বন্দী, বানের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। অনেকে পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই হলেও অনেকে বাড়ির ছাদে, গাছে, বন জঙ্গলে আটকা পড়েছেন। সামাাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গলা পরিমাণ পানিতে ছোট শিশুর ভয়ার্ত দৃষ্টিতে অবাক চোখে থাকিয়ে থাকা, একটা পাত্রে ফুলে মতো শিশু, আরেকটি পাত্রে দুটি বেড়াল ভেসে যাওয়ার দৃশ্য হাজারো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। গর্ভবতী মহিলার ভেসে যাওয়ার দৃশ্য, প্রবাসীর রেমিট্যান্সযোদ্ধার স্ত্রীপুত্রকে বাঁচানোর আর্তনাদ, এক পাল গরু, মহিষ, ফার্মের মৃত মুরগী, ছোট ভাইটির কোলে শিশুর ভেসে যাওয়া লাশ, বাবার কোলে সন্তানের লাশ, বৃদ্ধ বাবামাকে টিনের ছাদ থেকে নামিয়ে কাঁধে করে পানি থেকে রক্ষা করার দৃশ্যও চোখে পড়েছে। জলে ভেজা পরিধানের এক কাপড়ে কোনো রকমে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে আসা মানুষের আহাজারি দেখে নীরবে নিভৃতে কেঁদেছি।

ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, রাঙামাটি, কত্মবাজার সিলেট, মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ, চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি, নাজিরহাট, রাউজান, ও রাঙ্গুনিয়া হাটহাজারিতে হালদার পানিতে ভেসে গেছে অনেক বাড়িঘর। ভালো লেগেছে চট্টগ্রামসহ দেশের মানুষ অনেকে নৌকা, স্পিড বোট, হেলিকপ্টারে নিয়ে মানুষকে বাঁচানোর জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন। বানভাসি মানুষের পাশে এগিয়ে এসেছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, স্থানীয় প্রশাসন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা, জেনারেশনজেড/জেনজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, ছোট শিশুরা পর্যন্ত তাঁদের ঈদ সেলামীর জমানো টাকা নিয়ে বন্যাদুর্গতদের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছে। বন্যার করাল গ্রাসের অনেকে নিষ্পেষিত পরিবারের মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে প্রতীক্ষায় আছে ত্রাণের জন্য। প্রশংসার দাবীদার বিভিন্ন সংগঠন যারা বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ বিতরণসহ নিবেদিত প্রাণ হয়ে নিরলসভাবে বানভাসিদের জীবন রক্ষায় উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সুযোগসন্ধানিরা অনেকে বাড়িঘর ডাকাতি ও মালামাল লুণ্ঠনে ব্যস্ত। কিছু স্বেচ্ছাসেবক আবার ডাকাতদের পাহাড়া দিচ্ছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাবার পানি, পরিধানের জামাকাপড়, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের কাপড়, প্রয়োজনীয় খাবার, শিশু খাদ্য, ওষুধ। বন্যাকবলিত এলাকায় পানি কমার পর পানিবাহিত রোগ ব্যাধী ছড়িয়ে পড়বে এ ব্যাপারে আমাদের চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য দপ্তরকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি বেসরকারি কর্মজীবীরা সামর্থ অনুযায়ী অর্থ, ব্যবসায়ী সংগঠন, বিত্তশালীরা প্রত্যেকে যাঁর যাঁর জায়গা থেকে এগিয়ে আসুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানে অনেকটা সর্বস্ব হারানোর মতো ওদের পাশে দাঁড়ান। আপনার এক চিলতে ভালোবাসায় বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষটি বেঁচে যাবে ছোট শিশুটির মুখে হাসি ফুটবে। ‘ওবা বেগগুন আইয়ুন বানভাসি মাইনষেরলাই ভালোবাসার হাত বাড়াই’

লেখক: প্রাবন্ধিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধু হয়ে থাকার চেয়ে অসময়ে বন্ধু হয়ে ওঠাই বড় বিষয়
পরবর্তী নিবন্ধআধুনিক বাংলা গান ও সমকালীন সমাজ