নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ৬৬ হাজার ৯৩১ ভোটে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী। গতকাল রোববার দিনভর গোলযোগহীনভাবে ভোটগ্রহণ শেষের পর মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গ ফল জানানো হয়।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন যাত্রার পর এবার হলো তৃতীয় নির্বাচন। এর আগের দুই নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এবার তার হ্যাট্রিক জয় এল। এর আগে তিনি আট বছর নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। খবর বিডিনিউজের।
মোট ১৯২টি কেন্দ্রের সবগুলোর ফলে দেখা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট। এদিকে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ের আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে নিজেদের পাঁচ বছর মেয়াদের ‘সর্বোত্তম’ স্থান দিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি গতকাল বলেন, বিগত ৫ বছরে যতগুলো সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার বিবেচনায় আমাদের প্রথম কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সর্বোত্তম।
মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে এবিএম সিরাজুল মামুন (খেলাফত মজলিস) পেয়েছেন ১০ হাজার ৭২৪ ভোট, মাছুম বিল্লাহ (ইসলামী আন্দোলন) পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯৮৭ ভোট, কামরুল ইসলাম (স্বতন্ত্র) পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট, জসীম উদ্দিন (খেলাফত আন্দোলন) পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৯ ভোট, রাশেদ ফেরদৌস (কল্যাণ পার্টি) পেয়েছেন ১ হাজার ৯২৭ ভোট।
ঢাকার পাশের এই নগরীর ভোটাররা নতুন মেয়র ও কাউন্সিলর নির্ধারণে ভোট দেন। এবার ভোটার ছিল ৫ লাখ ১৭ হাজার। আর সম্পূর্ণ ভোটই গ্রহণ হয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে)। এবার ভোটের হার ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে। এই সংখ্যা গত দুইবারের চেয়ে কম।
ঢাকার পাশের এ শিল্পনগরীতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ নির্বাচনে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর অভিযোগে উত্তাপ ছড়ালেও ভোটগ্রহণ শেষ হয় শান্তিপূর্ণভাবেই। এবার প্রথম যন্ত্রে চাপ দিয়ে খুব সহজে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন অনেকেই। আবার আঙুলের ছাপ না মেলায় বয়স্ক অনেকের ভোগান্তি হয়। উৎসবের আমেজে ভোটের মাঠে দিনভর আলোচনায় থাকে ভোটগ্রহণের শ্লথ গতি।
টানা দুইবার মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী আইভী এবারও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। তিনি সকালে ভোট দিয়ে বলেন, নৌকার জয় হবেই হবে। গণজোয়ারের জয় হবেই হবে। তবে ফল যাই হোক, তা মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র আলী আহমদ চুনকার মেয়ে আইভী। বিজয়ী হওয়ার পর তিনি দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকেই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গে আলোচনা করেও কাজ করার কথা বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে ভোট দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে এসে তৈমুর বলেন, ভোটের ব্যবধান হবে লক্ষাধিক। আল্লাহর রহমতে আমি লক্ষাধিক ভোটে জিতব। তবে হেরে যাওয়ার পর তিনি বলেন, প্রশাসনিক ও ইভিএমের কারচুপির কারণে তাকে ভোটে হারতে হয়েছে।
২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটিতে প্রথমবার ভোট হয়েছিল নির্দলীয় প্রতীকে। সেবার আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আইভী। ওই সময় তৈমুর প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে ভোটের আগের দিন তাকে সরে যেতে হয়েছিল।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ভোট হয় দলীয় প্রতীকে। সেবার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়েই আইভী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খানকে তিনি হারান পৌনে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে। ২০১৬ সালে পরের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী করেছিল সাখাওয়াত হোসেনকে। তবে ফল বদলায়নি। আইভীই আবার মেয়র হন। এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদ হারাতে হয় তৈমুরকে।