দীর্ঘদিন ধরেই কম্পিউটিংয়ের অগ্রভাগে রয়েছে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি আইবিএম। এআইয়ের যুগেও নিজেদের সেই ধারা ধরে রেখেছে কোম্পানিটি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার তৈরির পর এখন এআই সুপারকম্পিউটার তৈরির জন্য ‘কোরওয়েভ’–এর সঙ্গে কাজ করছে আইবিএম। তবে এ ধাপের কিছু মানবিক প্রভাবও রয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাতের সময় আইবিএমের প্রধান অরবিন্দ কৃষ্ণা বলেছেন, মানবসম্পদ বিভাগের দুইশ কর্মীর কাজ এআই এজেন্টদের হাতে তুলে দিচ্ছে তারা।
আইবিএমের এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি শিল্পে এআই বিপ্লবের কঠোর বাস্তবতারই প্রতিফলিত, যেখানে প্রযুক্তিগত নয় এমন বিভিন্ন কাজ ক্রমেই এআই অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট। আইবিএমের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন কিছুটা অদ্ভুত। কারণ এইচআর বিভাগে কিছু কর্মী এআই টুলের কারণে চাকরি হারাচ্ছেন। তবে একই সময়ে কোম্পানি অন্যান্য বিভাগের জন্য আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়োগ দিচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
কৃষ্ণা বলেছেন, আমরা আইবিএমের ভেতরে নির্দিষ্ট এন্টারপ্রাইজ ওয়ার্কফ্লোতে এআই ও অটোমেশন ব্যবহার করে অনেক কাজ করেছি। কিন্তু মোট কর্মসংস্থান আসলে বেড়েছে। কারণ অন্যান্য ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছি আমরা। ভিন্ন এক সাক্ষাৎকারে আরেক মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গকে আইবিএম প্রধান বলেছেন, আমি সহজেই দেখতে পাচ্ছি’ প্রায় ২৬ হাজার ব্যাক–অফিস কর্মীর প্রায় ৩০ শতাংশ এআইয়ের মাধ্যম প্রতিস্থাপিত হতে পারে।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনের হিসাব অনুসারে, এর ফলে কোম্পানিটির প্রায় আট হাজার চাকরির ওপরই প্রভাব পড়বে। কারণ এ ধরনের পদে নতুন নিয়োগ বন্ধের পরিকল্পনা করছে আইবিএম। একইসঙ্গে প্রথম ত্রৈমাসিকে মূলত প্রযুক্তিগত পদে প্রায় সাত হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছে কোম্পানিটি। প্রযুক্তি শিল্পে এই হট্টগোল এত বড় যে, শীর্ষ এআই গবেষকদের জন্য কোটি কোটি ডলার খরচ করছে মার্কিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট মেটা, আবার এআই কর্মীদেরও ছাঁটাই করছে কোম্পানিটি। এ কোনো নিশ্চিত গৌরবের পথ নয়।
জেনারেটিভ এআই আসার পর থেকেই দ্রুত এটিকে গ্রহণের জোয়ার দেখা গিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে, যার মূল্য দিতে হয়েছে মানব কর্মীদের। অক্টোবরে প্রায় পাঁচ লাখ কর্মীকে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে মার্কিন ই কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন। প্রযুক্তি খাতের অন্যান্য কোম্পানিও একই রকম ঝুঁকি নিচ্ছে, যা আরও বাড়ছে এআই নেতা ও বিশ্লেষকদের প্রচণ্ড উচ্ছ্বাসের কারণে। তবে এআইয়ের মাধ্যম অর্জিত লাভের বাস্তবতা যতটা সহজ মনে হয় তা ততটা সরল নয়। কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর ব্যর্থতার মূল্য নিয়ে এসেছে এআই।
গত মাসে এমআইটি থেকে প্রকাশিত এক আলোচিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এআইভিত্তিক উদ্যোগের বিপুল অংশই কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেবল পাঁচ শতাংশ কোম্পানিই এআইতে বিনিয়োগের কারণে ইতিবাচক আয়ের বৃদ্ধি দেখেছে। এমআইটির প্রতিবেদন আরও বলছে, জেনারেটিভ এআইতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যবসায়িক বিনিয়োগ থাকার পরও ৯৫ শতাংশ কোম্পানিই শূন্য রিটার্ন পাচ্ছে। ম্যাককিনসে’র আরেকটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কেবল এক শতাংশ মার্কিন কোম্পানিই এআইতে বিনিয়োগের চেয়ে বেশি লাভ পেয়েছে। ‘বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ’–এর বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রতি তিনটি কোম্পানির মধ্যে একটি কোম্পানি এআইতে আড়াই কোটিরও বেশি খরচের পরিকল্পনা করছে। তবে প্রায় ৭৫ শতাংশ কোম্পানি এ বিনিয়োগ থেকে কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না।










