আইপিএল নিলামের দ্বিতীয় দিনটা বাংলাদেশের জন্য ছিল হতাশার। মোস্তাফিজুর রহমান এবং রিশাদ হোসেনের নাম উঠেছিল নিলামে। কিন্তু কোনো দলই আগ্রহ দেখায়নি বাংলাদেশের দুই তারকার জন্য। এরপর তাওহীদ হৃদয়, লিটন দাস এবং তাসকিন আহমেদকে নিলামেই ডাকা হয়নি। একই ভাগ্য সাকিব আল হাসানের জন্য। আইপিএলের মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশিদিন প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন সাকিব। তাকেই তোলা হলো না নিলামে। এরপরেই ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনিও ব্যর্থ আইপিএলের দলগুলোর আগ্রহ জন্মাতে। বাংলাদেশ থেকে আইপিএল নিলামে নাম দিয়েছিলেন ১২জন। নিলামের এক্সিলারেটেড রাউন্ডে মোস্তাফিজুর রহমানের নাম ডাকা হলেও কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই সাড়া দেয়নি। মোস্তাফিজের পর আইপিএলে দল পাননি রিশাদ হোসেনও। গত আসরে ২ কোটি রুপি ভিত্তিমূল্যে চেন্নাইয়ে নাম লিখিয়েছিলেন বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। পুরো মৌসুম খেলতে না পারলেও খুব একটা খারাপ করেননি তিনি। ৯ ম্যাচ খেলে দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজ। তবে নতুন আসরের জন্য তাকে ধরে রাখেনি চেন্নাই। এবার মেগা নিলামে নিজের ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপি রাখেন তিনি। কিন্তু এবার কোনো দলই আগ্রহ প্রকাশ করল না তার প্রতি। ২০১৬ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে চ্যাম্পিয়ন করার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন মোস্তাফিজুর। সে বছর সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নেন বাঁহাতি এই পেসার। কিন্তু এরপর আইপিএলে নিজের ক্যারিয়ার খুব একটা সমৃদ্ধ করতে পারেননি তিনি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রাজস্থান রয়্যালস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেললেও একাদশে ছিলেন না নিয়মিত। যদিও গত আসরে আলোড়ন তুলেছিলেন বটে। চেন্নাইয়ের চিপক স্টেডিয়ামের সঙ্গে তার বোলিংয়ের ধরন ছিল বেশ মানানসই। কিন্তু এবার চেন্নাইও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এদিকে গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বল হাতে দারুণ ঝলক দেখিয়েছিলেন রিশাদ হোসেন। যার সুবাদে দল পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বিগ ব্যাশেও। কিন্তু আইপিএলে এই লেগ স্পিনারের প্রতি আগ্রহ দেখাল না কোনো দল। তার ভিত্তিমূল্য ছিল ৭৫ লাখ রুপি। যদিও আইপিএল নিয়ে খুব একটা আশা ছিল না রিশাদের।
গত টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১৪ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন রিশাদ। কিন্তু সামপ্রতিক সময়ে ফর্ম পক্ষে যাচ্ছে না তার। সবশেষ ভারত সফরের তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ৩ উইকেট পেলেও বাকি দুই ম্যাচ ছিলেন উইকেটশূন্য। এরপর শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সুযোগ পেলেও উইকেট পাননি। বাংলাদেশ দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি দলে আছেন তিনি। সেখানেই নিজেকে মেলে ধরার অপেক্ষায় আছেন এই তরুণ।
এদিকে রংপুর রাইডার্সের হয়ে গ্লোবাল সুপার লিগ টি–টোয়েন্টি খেলতে বর্তমানে গায়ানায় আছেন রিশাদ। অন্যদিকে লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়ের সেট পার হয়ে গেলেও তাদের নাম নিলামে তোলা হয়নি। অর্থ্যাৎ এই দুজনের দল পাওয়ার আর সম্ভাবনা নেই। সৌদি আরবের জেদ্দায় বসেছে দ্বিতীয় দিনের মেগা নিলাম। আগের দিন তোলা হয়েছিল ৮৪ জন ক্রিকেটারকে। দুইদিনে মোট নিলামে উঠবেন ৫৭৭ জন ক্রিকেটার। আগের দিন দল পেয়েছেন ৭২ জন ক্রিকেটার। সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ ২০৪ জন ক্রিকেটারের দল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেখানে বিদেশিদের জন্য সংখ্যাটা ৭০। দ্বিতীয় দিনে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নিলামে তোলা হয়েছিল কেন উইলিয়ামসনকে। এই কিউই ব্যাটার দল পাননি। রোভম্যান পাওয়েলকে ১ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে কিনেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ফাফ ডু প্লেসিকে ২ কোটিতে নিয়েছে দিল্লি ক্যাপিটালস। আজিঙ্কা রাহানে, মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও পৃথ্বী শ‘কে দলে নেয়নি কেউই। শার্দুল ঠাকুর দল পাননি। ৩ কোটি ২০ লাখে ওয়াশিংটন সুন্দরকে পেয়েছে গুজরাট। ২ কোটি ৪০ লাখে স্যাম কারেনকে কিনেছে চেন্নাই সুপার কিংস। ৭ কোটিতে পাঞ্জাবে মার্কো জানসেন। দল পাননি ড্যারিল মিচেল। ৫ কোটি ৭৫ লাখে বেঙ্গালুরুতে ক্রোনাল পান্ডিয়া। নীতিশ রানাকে ৪ কোটি ২০ লাখে পেয়েছে রাজস্থান। শাই হোপ অবিক্রিত থেকেছেন। রায়ান রিকেলটনকে ১ কোটিতে পেয়েছে মুম্বাই। দল পাননি কে এস ভরত। ২ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে পাঞ্জাবে জস ইংলিস। দল পাননি অ্যালেঙ ক্যারি ও ডন ফেরেইরা। ৬ কোটি ৫০ লাখে রাজস্থানে গেলেন তুষার দেশপান্ডে। ২ কোটি ৪০ লাখে গুজরাটে জেরাল্ড কোয়েটজে। ১০ কোটি ৭৫ লাখে বেঙ্গালুরুতে ভুবনেশ্বর কুমার। ৮ কোটিতে আরটিএম কার্ডে দিল্লিতে মুকেশ কুমার। দীপক চাহারকে ৯ কোটি ২৫ লাখে দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই। আকাশ দীপকে ৮ কোটিতে নিয়েছে লক্ষ্েণৗ। ২ কোটিতে পাঞ্জাবে লকি ফার্গুসন। অবিক্রিত থেকেছেন মুজিবউর রহমান। তবে তারই স্বদেশি তরুণ স্পিনার আল্লাহ গাজানফারকে ৪ কোটি ৮০ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে মুম্বাই। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে আফগানিস্তানের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন এই রহস্য স্পিনার। দল পাননি বিজয়াকান্ত বিশ্বকান্ত, আকিল হোসেইন ও কেশব মহারাজ। এঙেলারেটেড রাউন্ডে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে দল পেয়েছেন শুভম দুবে। তাকে ৮০ লাখ রুপিতে দলে ভিড়িয়েছে রাজস্থান। ৩০ লাখে চেন্নাইয়ে শেখ রশিদ। আনসুল কম্বুজকে ৩ কোটি ৪০ লাখে দলে ভিয়াড়িয়েছে চেন্নাই। ১ কোটি ৩০ লাখে আর্শাদ খানকে পেয়েছে গুজরাট। ৫০ লাখে বেঙ্গালুরুতে স্বপ্নীল সিং। ১ কোটি ৩০ লাখে গুজরাটে গেছেন গুরনূর ব্রার। ২ কোটি ৬০ লাখে গুজরাটে শারেফানে রাদারফোর্ড। ২ কোটি ৪০ লাখে লক্ষ্ণৌতে শাহবাজ আহমেদ। ৩ কোটিতে টিম ডেভিডকে পেয়েছে বেঙ্গালুরু। ১ কোটি ৭০ লাখ রুপিতে দীপক হুদাকে দলে নিয়েছে চেন্নাই। ৫ কোটি ২৫ লাখে মুম্বাইয়ে উইল জ্যাক। ২ কোটি ৪০ লাখে পাঞ্জাবে আজমতউল্লাহ ওমরজাই। ৯০ লাখে গুজরাটে সাই কিশোর। ১ কোটি ৫০ লাখে বেঙ্গালুরুতে রোমারিও শেফার্ড।