সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফান সেলিমকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও সাজার ঘটনায় দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে বিচারের প্রশংসা করেছে লোকজন। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, মদ্যপান ও ওয়াকিটকি ব্যবহার করায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম এবং তার দেহরক্ষী মোহাম্মদ জাহিদকে এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত সোমবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা নাগাদ পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাটে হাজী সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তারের পর এই দণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তা মারধরের ঘটনায় সাংসদ হাজী সেলিমের গাড়ি চালক মিজানুর রহমানকে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান পুলিশের আবেদনের শুনানি করে এই আদেশ দেন। মিজানকে এদিন আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপক্ষের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানি করেন হেমায়েত উদ্দিন খান হীরণ।
মূলত রোববার রাতে কলাবাগান এলাকায় নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমেদের মোটর সাইকেলের সঙ্গে ইরফানের গাড়ির ধাক্কা লাগা এবং তার জেরে ওই কর্মকর্তাকে মারপিটের ঘটনায় ইরফান ও তার সহযোগীরা আটক হয়েছে। বাসা থেকে মাদক, অস্ত্র, ওয়াকিটকি, দড়ি, হাড়সহ আরো অনেক কিছু উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেছেন, ‘প্রভাবমুক্ত থেকেই হাজী সেলিমের ছেলের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত হবে।’
সাংসদ হাজী সেলিমের পুত্র ইরফানের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ নেওয়া হলো তা প্রশংসাযোগ্য। ক্ষমতার অপব্যবহার যারা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় আমরা অভিনন্দন জানাবো সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তাদের অতি দ্রুত আইনের আওতায় এনেছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে।
ঘটনাটি সকল সন্ত্রাসী মাস্তানের জন্য আরেকটি পরিষ্কার বার্তা যে, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আইনের শাসনে বিশ্বাসী। এই রাষ্ট্রে কোনো গুণ্ডামি-মাস্তানির কোনো সুযোগ নেই। সকল মাস্তানির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রযন্ত্র সক্রিয় রয়েছে।
আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ বলেছেন, এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে শেখ হাসিনার রাষ্ট্রে মাস্তানির কোনো জায়গা নেই। সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো নতুন ঘটনা নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিটি পদক্ষেপেই বার বার প্রমাণিত হচ্ছে, এই রাষ্ট্রে নাগরিকদের নিরাপত্তা রয়েছে। কেউ নাগরিকদের উপর কোনো অন্যায় করে পার পাবে না। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে কোনো গুণ্ডামি-মাস্তানি চলবে না।’ তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশে বিচারহীনতার ব্যবস্থার বিপরীতে প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তিনি এটি বুঝিয়ে দিয়েছেন, দুষ্টের দমনের জন্য রাষ্ট্রের ‘কোয়ার্সিভ পাওয়ার’ ব্যবহারের প্রয়োজন রয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই খুনি চক্র এবং তাদের সুবিধাভোগীরা এ দেশে বিচারহীনতা প্রতিষ্ঠিত করেছিল মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে কোনো অপরাধীকে কখনোই প্রশ্রয় দেয়া হয়নি। বরং দলমত নির্বিশেষে যে-ই অপরাধ করেছে, তারই বিচার হয়েছে।
আসলে সংসদ সদস্যের গাড়ি থেকে নাগরিকের ওপর হামলা – কোনোভাবেই তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যারা এ কাজটি করেছে তারা সন্ত্রাসী আচরণ করেছেন, তাদেরকে অবশ্যই আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ আইন কেউ হাতে তুলে নিতে পারে না এ অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি।
হাজী সেলিম কিংবা তার পুত্রের বিরুদ্ধে আগে কি কোনো অভিযোগ ছিল না? থাকলেও পুলিশ প্রশাসন এতোদিন তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে পারে নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আইনের শাসন না থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের ওপর অন্যায়ের প্রতিকার পায় না। কিন্তু এখানে সরকারের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ জড়িত। এমপি এবং নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। সরকার তার বিবেচনায় মনে করেছে এখন নৌবাহিনীর কর্মকর্তার পক্ষেই অবস্থান নেয়া শ্রেয়। তাই আমরা অভিযান বা অ্যাকশন দেখতে পাচ্ছি। তা না হলে দেখতাম না। মেজর(অব.) সিনহা হত্যার ঘটনায়ও তাই হয়েছে।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন এরকম আরো অনেক হাজী সেলিম এবং ইরফান সেলিম আছেন, তাদেরও সাম্রাজ্যও আছে। তারা রাষ্ট্রের আর কোনো ক্ষমতাশালী পক্ষের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানোর আগে তাদের কাহিনি প্রকাশ পাবে না। ক্যাসিনো বা পাপিয়াদের ঘটনাও একই কারণে প্রকাশ পেয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির ঘটনায় সাহেদ-সাবরিনারা আটক হয়েছে। কিন্তু মূল হোতাদের কিছু হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের জন্য আরো আন্তরিক হয়ে কাজ করার জন্য তাঁরা আহ্বান জানান।