নগরীতে নারী অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নারীদের একটা অংশ ছিনতাই, চুরি, অপহরণ, প্রতারণা, অস্ত্র বহন, মাদক বিক্রি ও বহন, যৌনতার জালে ফেলে প্রতারণা, নকল টাকা বহনসহ বিভিন্ন ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীদের দিয়ে অপরাধ করানো তুলনামূলক নিরাপদ। এ কারণেই বড় অপরাধীরা তাদের দলে টানছে। প্রশাসন বলছে, সামাজিক অবক্ষয় এবং কোমল মানসিকতার সুযোগ নিয়ে নারীদের বিপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের প্রধানদের মোটিভেটেড করে তাদের অপরাধ জগতে নিয়ে যাচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বেশ কয়েকজন নারী অপরাধী স্বীকারোক্তিমূলক চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। তাতে জানা যায়, মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নগদ টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়াসহ খুনের মতো অপরাধে জড়িত হচ্ছে তারা। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের রয়েছে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। অপরাধ করেও সহজেই জেল থেকে বের হয়ে যায় তারা। মানুষকে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেওয়া সহ খুনের মতো অপরাধে জড়িত ওই সব নারী। তাদের আছে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। অপরাধ করেও ছাড়া পাওয়ার মতো শক্ত খুঁটি আছে তাদের, যোগাযোগ আছে প্রশাসনের প্রভাবশালী কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে। ধরা পড়ার পরও এরা সহজে বেরিয়ে আসে।
গত ১১ জুন ‘বাড়ছে নারী অপরাধীর সংখ্যা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে। এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে নারী অপরাধীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্যমতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোতে নারীর সংখ্যা নামমাত্র। তাছাড়া নারীদের অপরাধ জগতে প্রবেশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন ধারণা নেই। কোনো টিমে একজন নারী থাকলে সাধারণ মানুষ যেমন সন্দেহ করে না, তেমনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দলও রাস্তায় তল্লাশিকালে তেমন হেনস্থা করে না। গত এক বছরে গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত, চোর, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, টানা পার্টি, জাল টাকা সরবরাহকারী, প্রতারক, অস্ত্র বাহক, মাদক ব্যবসায়ী, শিশু অপহরণ এমনকি জঙ্গি তৎপরতায়ও নারীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিএমপির বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ আজাদীকে বলেন, পুরুষ অপরাধীর ক্ষেত্রে আমরা যতোটা এগ্রেসিভ হতে পারি, অপরাধী নারী হলে আমরা তা পারি না। তাছাড়া ধরেন, এক ব্যবসায়ীকে কিডন্যাপ করতে চায়। তাকে কোনো পুরুষ ডাকলে সে নাও আসতে পারে, কিন্তু নারী হলে তাকে নিয়ে আসাটা সহজ হয়। এসব কারণে অপরাধের ক্ষেত্রে নারীর সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে।
নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নারীর জড়িয়ে পড়ার কারণে সামাজিক অবক্ষয় বাড়ছে। সারাদেশেই মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে নারী। তার পাশাপাশি নতুন ভাবে জাল টাকার সাথে নারীর সম্পৃক্ততা সচেতন মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
অর্থালোভ আর উচ্চাবিলাসী জীবন-যাপনের জন্যই নারী বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত নারীর বেশির ভাগই ছিন্নমূল পরিবারের। আবার উচ্চ বিত্ত পরিবারের নারীও রয়েছেন। এ ধরনের কাজে কম জড়াচ্ছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারী।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যেসব পরিবারের নারী এমন অপরাধে জড়াচ্ছেন, সেসব পরিবারে পারিবারিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে। বেশি প্রভাব পড়ছে সন্তানের উপর। অপরাধে জড়িয়ে পড়া নারীর সন্তানেরও অপরাধে জড়ানোর আশঙ্কা বেশি বলেই মনে করছেন তারা।
আসলে নারীরা কেন এ চক্রে পদার্পণ করছে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে অভিজ্ঞদের বক্তব্যটা তেমন। তাঁরা বলেন, একজন পুরুষকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহজে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করতে সুযোগ পায়। অন্যদিকে নারী যখন বিভিন্ন ড্রাগস কিংবা নিষিদ্ধ বস্তু বহন করে তখন তাকে সন্দেহের আওতায় নিয়ে আসাটা কঠিন। এ সুযোগে নারীদের দিয়েই অপরাধীরা অপরাধমূলক কাজ করাচ্ছে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেন, নারীরা সমাজের বিভিন্ন অবস্থান থেকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়। বিশেষ করে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই অপরাধ জগতে পা রাখছে। অনেকেই পরিবারের প্রধান ব্যক্তিটির ইচ্ছাপূরণে বড় বড় অপরাধ করছে। কেউ কেউ ব্ল্যাকমেলের শিকার হয়ে বাধ্য হচ্ছে নানান অপকর্মে জড়াতে। অপরাধীরা অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নারীদের ব্যবহার করছে।
এজন্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নারীকে নিরুৎসাহিত করতে পারিবারিক মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।