র্যাবের সদস্যরা সড়কে যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতা প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে ছদ্মবেশে ও যাত্রীবেশে গণপরিবহনে অবস্থান করছেন বলে জানানো হয়েছে। র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ১৮ নভেম্বর দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামীতেও হরতাল–অবরোধে নাশকতা প্রতিরোধে র্যাবের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘অবরোধ চলাকালীন শুরুর সময় থেকে পরবর্তী সময় থেকে যাত্রীবাহী, পণ্যবাহী যানবাহন ও তেলবাহী লরী মিলিয়ে ১৭ হাজারের বেশি গাড়িকে স্কট প্রদান করেছে র্যাব। ২০০–এর বেশি কনভয়কে স্কট প্রদান করে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। আমরা এটা করছি যাতে অর্থনৈতিক চেইনটা ঠিক থাকে। আমাদের এই স্কট চলমান রয়েছে। র্যাবের চার শতাধিক টহল টিম স্কটিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। অবরোধে ৫০ টির বেশি তেলবাহী লড়িকে স্কট দিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমাদের এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘নাশকতাকারীরা স্থান কাল পাত্র ভেদে কিছু চোরাগোপ্তা হামলা করছে। এসব হামলা প্রতিরোধে র্যাব সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে অবস্থান করছে, গণপরিবহনে যাত্রীবেশে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে আমাদের সফলতা রয়েছে, আমরা বেশ কয়েকজনকে নাশকতার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। ছদ্মবেশে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান, সাদা পোশাকে ও যাত্রীবেশে গণপরিবহনে অবস্থানের র্যাবের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। এ ছাড়া, আমরা হামলার জায়গাগুলো শনাক্ত করছি, বাস মালিকদের সঙ্গে বসেছি, যারা যে সহায়তা চায় দিচ্ছি। এর ফলে চলন্ত গাড়িতে কিন্তু অগ্নিসংযোগ কমেছে। বাসমালিকদের অনুরোধ করবো যাতে নির্জন স্থানে যানবাহন না রাখে, তাহলে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ দুরূহ হবে।’
আসলে সাম্প্রতিক সময়ে যানবাহনে অগ্নিসংযোগসহ নাশকতার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে এই সময়ে দেশের সামগ্রিক আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কেননা, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা সুখকর নয়।
বিশৃঙ্খলা বা নাশকতা রোধে চট্টগ্রামেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যা এই সময়ের জন্য জরুরি ছিল। ১৩ নভেম্বর নগরীর সার্কিট হাউজে জেলা আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সভায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেগুলো জনমানসকে প্রশান্তি দিতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, ট্রেন, বাস ও লঞ্চযোগে যাতায়াতকারী যাত্রীদের ছবি তোলা বা ভিডিও করার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে পরবর্তীতে তাদের শনাক্ত করা যায়। পাশাপাশি সকল যাত্রীকে সার্চ করতে হবে। যাতে কেউ পেট্রোল বোমা বা বিস্ফোরক জাতীয় কোনো কিছু বহন করতে না পারে।
গত ১৪ নভেম্বর আমরা লিখেছিলাম, নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়। কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসন বদ্ধপরিকর। তবে এসব কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনীতিবিদসহ সমাজের নানা প্রতিনিধিত্বশীল মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে নাশকতা মোকাবিলা করতে হবে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা হতে পারেু এমন ইস্যুতে অপপ্রচার বন্ধ এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আরও কঠোর হতে হবে। বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্ত ও নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া নাশকতা প্রতিরোধে এমন কিছু নতুন পদ্ধতি চালু করতে হবে– যাতে সন্ত্রাসীদের ধরতে সুবিধা হবে।
যদিও আমরা জানি, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। চোরাগোপ্তা কিংবা ছদ্মবেশে হামলা মোকাবেলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সামপ্রতিক সময়ে আমরা যার কিছু নমুনা দেখছি। যারা এ ধরনের চোরাগোপ্তা নাশকতা করছে, তারাও কিন্তু তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। এসব মাথায় রাখতে হবে। এখন যারা যাত্রী বেশে চোরাগোপ্তা হামলা কিংবা নাশকতা করছে সেটি শতভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বাসে যাত্রীবেশে নাশকতাকারীদের আগমনকে রোধ করতেই হবে। যত নির্মম নিষ্ঠুর হোক না কেন, আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর হাতে। নাশকতাকারীরা যদি তাদের অপতৎপরতা বন্ধ না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। মোট কথা, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুস্কৃতকারীরা যাতে এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আগুন ও বোমা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। এই সময়ে আইন–শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপরাধীচক্র ঘায়েল করতে যা যা করা দরকার, তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।