কোর্ট হিলে থাকা আইনজীবীদের ৫ টি ভবনকে কেন্দ্র করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে দেয়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির বিষয়ে বেশকিছু করণীয় ঠিক করেছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
গতকাল বুধবার আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সাধারণ সভা করে এ বিষয়ে করণীয় ও সিদ্ধান্ত ঠিক করা হয়। সেগুলো হলো, আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে আলোচনাক্রমে তাদের অবস্থান জানানো। অবস্থান ইতিবাচক না হলে ধারাবাহিকভাবে সংবাদ সম্মেলন, অবস্থান কর্মসূচি, সমাবেশ করাসহ আন্দোলনের কর্মসূচি প্রদান করা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতকারের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী, সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যগণ, সিডিএ চেয়ারম্যান, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বার কাউন্সিল নেতৃবৃন্দের সাথে সার্বিক বিষয় উল্লেখপূর্বক অবগত করা। কোর্ট হিল এলাকায় জেলা প্রশাসকের সাম্প্রতিক গৃহীত বিভিন্ন কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গ শিরোনামে এ সভা আহ্বান করা হয়। সমিতির সভাপতি আবু মোহাম্মদ হাশেম এতে সভাপতিত্ব করেন।
সভায় বক্তব্য দেন, সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়া উদ্দিন, সমিতির সাবেক সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সমিতির সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরী, রতন কুমার রায়, শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনতোষ বড়ুয়া, মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও আইয়ুব খান। সভা পরিচালনা করেন সহ সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ এরশাদুর রহমান রিটু। এএইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, জেলা প্রশাসক এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সিডিএ, ওয়াসা, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদির মাধ্যমে সমিতির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পত্র প্রেরণ করে আসছেন। সমিতির পানি সংকট নিরসনে ওয়াসা বরাবরে আবেদনক্রমে সমিতির জায়গায় একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে জেলা প্রশাসক অযাচিত ও এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ বাহিনী পাঠিয়ে বাধা প্রদানের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে তিনি ব্যর্থ হয়ে ওয়াসার মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা চালান। এতদিন জেলা প্রশাসক সমিতির ভবনগুলোকে ‘অবৈধ’ উল্লেখ করতেন। সমিতির ভবনসমূহ সিডিএ কর্তৃক যথাযথভাবে অনুমোদিত পাওয়ার পর এখন তিনি সেই বক্তব্য থেকে সরে এসে সমিতির ভবনসমূহ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করছেন। একটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ কি-না তা নির্ধারণ করার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশেষজ্ঞ মতামত ছাড়া জেলা প্রশাসক কোন প্রক্রিয়ায় ভবনগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন। সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক ১৯৮৫ সালে পুরাতন আদালত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে তদস্থলে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে আমাদের আন্দোলনের ফলে তা সংস্কারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সংস্কার পরবর্তীতে পুরাতন আদালত ভবন ব্যবহারের বিষয়ে সরকার কর্তৃক কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে, কিন্তু জেলা প্রশাসক সে সকল নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে পুরাতন আদালত ভবনে অতিরিক্ত লোক সমাগম করা, ভবনের আশে-পাশে, ভিতরে বিভিন্ন নির্মাণ কাজ করা, ভবনের মূল ফাউন্ডেশনের চারপাশে গর্ত খনন করে বাগান নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ ভবনের ক্ষতিসাধন করছেন। যার ফলে শতবছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তির মর্যাদা সম্পন্ন পুরাতন আদালত ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছেন।
তিনি বলেন, গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনা হাস্যকর। যে স্থানে গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছে এবং সমিতির নতুন ভবনের নির্মাণের জন্য যে স্থানে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় তার আশে পাশে কোথাও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেনি। টিনশেডের পুলিশ ব্যারাকের পাশে জেলা প্রশাসকের কর্মচারী সমিতির ক্যান্টিনের নীচে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
কোর্ট হিল এলাকার অবৈধ স্থাপনা, জেলা প্রশাসকের ভাড়ায় লাগিয়তকৃত অবৈধ টিনশেড দোকান-পাট এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কোর্ট হিল এলাকা থেকে অপসারণপূর্বক বিচারিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরিবেশ তৈরি করার দাবি আমাদের দীর্ঘ দিনের। কোর্ট হিল এলাকা অবৈধ প্রভাব ও দখলমুক্ত হোক তা আমরা সব সময় চাই।
এএইচএম জিয়াউদ্দিন আরো বলেন, জেলা প্রশাসক হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে পুরাতন আদালত ভবনের সম্মুখভাগে সৌন্দর্য্যবর্ধনের নামে চলাচলের একমুখী রাস্তার অংশে এবং ভবনের পূর্বপাশের সামনের খোলা জায়গায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রাতের অন্ধকারে বাগান নির্মাণ, ফুলের টব স্থাপনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের কোনো ধরনের নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও জেলা প্রশাসক সরকারী কোষাগারের বিপুল অর্থ ব্যয় করে নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসকের এই সকল কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।