ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে যে মামলার আবেদন তামিমার ‘আগের স্বামী’ রাকিব হাসান করেছেন, তা গ্রহণ করে পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রাকিবের জবানবন্দি শুনে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীম গতকাল বুধবার দুপুরে এই আদেশ দেন। অপরদিকে গতকাল বিকেলে বনানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ক্রিকেটার নাসিরকে বিয়ে করার কথা জানিয়েছেন তামিমা। সংবাদ সম্মেলনে নাসিরের আইনজীবী তামিমার ডিভোর্স সার্টিফিকেটের কপি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এ সময় সংবাদ মাধ্যমে যেসব তথ্য আসছে তা সত্যি নয় উল্লেখ করে এই ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানিয়ে নাসির বলেন, তামিমাকে আইন ও শরিয়তের বিধি মেনে বিয়ে করেছি।
বিডিনিউজ জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর আদালতে রাকিবের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ইসরাত হাসান। এ আদালতের পেশকার হেলাল উদ্দিন বলেন, আগের বিয়ে চলমান থাকা অবস্থায় অন্যত্র বিয়ে, অন্যের স্ত্রীকে প্রলুব্ধ করে নিয়ে যাওয়ায় মানহানি এবং ব্যাভিচারের অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়। মামলাটি তদন্ত করে আদালত ৩০ মার্চের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
মামলার আর্জিতে রাকিব অভিযোগ করেন, তাকে ডিভোর্স না দিয়েই ক্রিকেটার নাসির হোসেনকে বিয়ে করেছেন তামিমা। এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন তিনি। আদালতে দেওয়া আর্জিতে বলা হয়, তামিমার সঙ্গে রাকিবের বিয়ে হয় ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। তাদের ৮ বছরের একটি মেয়েও রয়েছে। তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু, একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সে তিনি কাজ করেন। পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে গতবছর মার্চে সৌদি আরবে গিয়ে তিনি লকডাউনে আটকা পড়েন। তবে ফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে রাকিবের ভাষ্য।
তিনি বলছেন, চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি তামিমা ও নাসিরের বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সেখান থেকেই বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। মামলার আর্জিতে নাসির ও তামিমার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪৯৪ ও ৪৯৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের সুযোগ রয়েছে।
তবে গতকাল বিকেলে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিষয় নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মামলার বিষয়ে এখনো কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন নাসির। নাসিরের আইনজীবী বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনের আগে আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি একটি মামলা হয়েছে। তবে মামলাটি কি বিষয়ে হয়েছে তার কোনো কাগজপত্র আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। কাজেই এ ব্যাপারে মন্তব্য করাটা দুরূহ।
বাংলানিউজ জানায়, সংবাদ সম্মেলনে আগের স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়েছে দাবি করে তামিমা বলেন, আমি তালাকের জন্য আবেদন করি ২০১৬ সালে। তা অনুমোদন হয় ২০১৭-তে। সম্পূর্ণ আইনিভাবে সবকিছু মেনে ডিভোর্সটা হয়। উনার (রাকিব) পরিবার এবং তিনি এই সম্পর্কে জানতেন। উনি এখন যা করছেন তা কেন করছেন এটা হয়তো আপনাদের সবারই বুঝা হয়ে গেছে।
আবেগাপ্লুত হয়ে তামিমা বলেন, আমি বলবো, আমাদের একটা বাচ্চা আছে ছাড়া উনি যত কথা বলেছেন, অন্য সব কথাই মিথ্যে। উনি যা যা বলেছেন সেসব কথার প্রত্যেকটি প্রমাণ আমাদের আছে। আরেকটা কথা আমি বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। ফেসবুকে ফেক আইডি বানিয়ে মিথ্যা সংবাদ দেওয়া হচ্ছে আমাদের বিষয়ে। আসলে আমাদের কোনো ফেসবুক আইডি এখন অ্যাক্টিভ নেই। নাসিরেরও নেই। ওর একটা ফেসবুক পেজ আছে। কোনোকিছু যদি জনগণকে জানাতে হয়, তাহলে আমরা ওর ফেসবুক পেজে এসে জানাবো। দয়া করে, অন্যের কথা শুনে বিষয়গুলো ছড়নো থেকে বিরত থাকুন।
বিবিসি বাংলা জানায়, আধঘণ্টা ধরে চলা সংবাদ সম্মেলনে নাসির হোসেন জানান, তামিমার বিয়ে ও সন্তান সম্পর্কে সবকিছু জেনেই তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা যা করেছি লিগ্যাল ওয়েতে। বেআইনি কিছু করিনি। আমরা যথেষ্ট পরিণত। সুতরাং বুঝে শুনে আইনগতভাবে কাজ করেছি। পুরো বিষয়টিতে তাদের দুজনের পরিবারকে ভুগতে হচ্ছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।