আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা মেনে চলতে হবে

শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন

| বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৫৬ পূর্বাহ্ণ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসকদের সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা মস্ত বড় ইস্যু। এটা আমাদের এখন এক নম্বর বিবেচ্য বিষয়। এখানে যেন আমরা বিফল না হই, কারণ এটাতেই আমাদের সমস্ত অর্জন। গত রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সকল নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এখন থেকে যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করব, সেখানে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও দেশের সকল মানুষকে সুরক্ষা প্রদান করা। নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়। কারণ সরকার দেশের সকল মানুষের সরকার। তাই তাকে সুরক্ষা দেওয়া আমার কাজ।

সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের অধিকার যেন ক্ষুণ্‌ন না হয় সেদিকে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনকে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়া মস্ত বড় দায়িত্ব। এই ইস্যুতে সারা দুনিয়া নজর রাখছে আমাদের উপরে। একটা ছোট্ট ঘটনা সারা দুনিয়ায় চাউর হয়ে যায়। তিনি বলেন, আমি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়কে বলেছি আপনারা সংখ্যালঘু হিসেবে কোনো কিছু দাবি করবেন না, দেশের নাগরিক হিসেবে দাবি করবেন। কারণ দেশের নাগরিক হিসেবে সংবিধান আপনাকে যে অধিকার দিয়েছে সেই অধিকার রাষ্ট্রের কাছে আপনার প্রাপ্য। এটা দাবি নয়, আপনার পাওনা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এটা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের মধ্যে ;প্রতিযোগিতা হতে পারে কার জেলায় বাজারদর কতটা ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে। কোনো চাঁদাবাজি বা অন্য যেসব অসুবিধা থাকে সেগুলো দূর করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশবাসী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির আশা করলেও ঘটেছে তার উল্টো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, খোদ রাজধানীতে গত ৬ মাসে প্রায় সব সূচকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহে পাঁচবার পুলিশের ওপর হামলা ও দুটি থানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ছিনিয়ে নেওয়া হয় একাধিক আসামি। ঢাকার অনেক এলাকায় এখন সন্ধ্যার পর মানুষ বাসার বাইরে বের হতে ভয় পায়। এই অবস্থায় কোনো কোনো এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অতিষ্ঠ মানুষ নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য বলছে, ঢাকায় গত আগস্ট থেকে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। আগস্টে রাজধানীর ৫০টি থানায় ৪টি ছিনতাইয়ের মামলা করা হলেও তা বেড়ে ডিসেম্বরে ৩৮টি হয়। ২০২৫ সালের জানুয়ারির ১৫ দিনেই ছিনতাইয়ের মামলা করা হয় ৩১টি। প্রকৃত ছিনতাই আরও বেশি। কারণ ছিনতাইয়ের শিকার বেশির ভাগ পথচারী মামলা করে না। আইনিপ্রক্রিয়া জটিল হওয়ায় ও হয়রানির আশঙ্কায় তারা মামলা করতে চায় না। গত আগস্টে ঢাকায় চুরির মামলা করা হয়েছিল ৪৩টি। মাসে মাসে বেড়ে ডিসেম্বরে তা ১২৬টি হয়। এভাবে ডাকাতি ও নারী নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছে।

যদিও আমরা জানি, পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। ঝটিকা হামলা বা ছদ্মবেশে হামলা মোকাবিলা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যার কিছু নমুনা দেখছি। হঠাৎ একদল লোক এসে মানুষকে নাজেহাল করার ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের হামলার কৌশল পরিবর্তন করছে। এসব মাথায় রাখতে হবে। এখন যারা নাশকতা করছে সেটি শতভাগ নির্মূল করা চ্যালেঞ্জিং। তবু চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যত নির্মম নিষ্ঠুর হোক না কেন, আইন প্রয়োগ করতে হবে কঠোর হাতে।

প্রধান উপদেষ্টা যেখানে বলেন, কে কোন মতবাদে বা রাজনৈতিক চেতনায় বিশ্বাসী সেটা বিবেচ্য নয়, নারী ও শিশু এবং সংখ্যালঘুসহ সকল নাগরিকের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেখানে নারীরা যদি নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হন, তাহলে সরকারের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তাই অযথা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। অপরাধীচক্রকে ঘায়েল করতে যা যা করা দরকার, তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে