আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৬ মে, ২০২৫ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় কারাগারে থাকা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাশকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট) আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সকালে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ এ আদেশ দেন। এ সময় চিন্ময় আদালতে হাজির ছিলেন না। কারাগার থেকে ভার্চুয়ালি তাকে হাজির করা হয়। এর আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী জোন) মো. মাহফুজুর রহমান আদালতের কাছে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফক হত্যা মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর (শোন অ্যারেস্ট) আদেশ চেয়ে আবেদন করেন।

আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ খুনে চিন্ময়ের জড়িত থাকার বিষয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তার আগে চট্টগ্রামে ও খুলনায় ইসকন পন্থীদের নিয়ে তিনি সমাবেশ করেন। সে সব সমাবেশে তিনি রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যের কারণে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আবেদনে আরো বলা হয়, চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় তাকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তিনি অনুসারীদের উদ্দেশ্যে দেখে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তার এমন উসকানিতে তার অনুসারীরা পুলিশের কাজে বাধাসহ আক্রমণ করে। মসজিদের গ্লাস ভাঙচুর করে। বিচারক ও বিচারপ্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর করে। সাধারণ লোকজনকে আক্রমণ করে আহত করে। আদালত পাড়ায় ব্যাপক নৈরাজ্যের সৃষ্টি করে এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে খুন করে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, মোট চারটি মামলায় চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। এরমধ্যে একটি হচ্ছে, আলিফ খুনে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ চেয়ে আবেদন। আবেদনটি বিষয়ে ভার্চুয়ালি শুনানি হয়েছে। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। বাকী তিনটি আবেদন বিষয়ে শুনানি হয়নি। মঙ্গলবার (আজকে) এ তিনটি আবেদনের উপর শুনানি হতে পারে।

নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর চিন্ময় দাশের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। দণ্ডবিধির ১২০()/১২৪()/১৫৩()১০৯/৩৪ ধারায় মামলাটি দায়ের হয়। নগরীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া উক্ত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তথা ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষের আইনজীবীরা তার জামিন চেয়ে সেদিন একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলাম জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ যখন চিন্ময়কে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাবে, তখন আগে থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়া তার অনুসারীরা প্রিজন ভ্যানের গতিরোধ করেন এবং প্রিজন ভ্যানের সামনে পিছে শুয়ে পড়েন। একপর্যায়ে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা পর লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিয়ে চিন্ময়কে বহনকারী প্রিজন ভ্যানকে কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত পাড়ায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর করে। শুরু হয় সংঘাত। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরই মধ্যে আদালতের প্রবেশ গেটের অদূরে মেথরপট্টি এলাকায় খুন হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ। উপর্যপুরি কুপিয়ে খুনিরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করে।

আদালত পাড়ায় সংঘটিত এসব ঘটনায় মোট সাতটি মামলা দায়ের হয়েছে। এরমধ্যে কোতোয়ালী থানায় ৬টি ও আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়। পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ৭৯ জনের নামে তিনটি, আলিফের বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নামে একটি (হত্যা মামলা) ও তার ভাই বাদী হয়ে ১১৬ জনের নামে একটি ও মোহাম্মদ উল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী ২৯ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া মো. এনামুল হক নামের একজন বাদী হয়ে ১৬৪ জনের নামে আদালতে আরো একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত সেটি কোতোয়ালী থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী পুলিশকে উত্ত্যক্ত, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
পরবর্তী নিবন্ধঘাড়-পেটের দাগ দেখে জানা গেল খালে ভাসা লাশটির পরিচয়