চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বিচারকের নাম ব্যবহার করে জাল সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগের একটি মামলায় এক আইনজীবীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন– আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন, সুমন দে ও রোজী আক্তার। গত রোববার রাতে নগরীর হালিশহর ও আন্দরকিল্লা এলাকা থেকে আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন ও সুমন দেকে এবং এর আগেরদিন শনিবার নগরীর আকবরশাহ এলাকা থেকে রোজী আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম দৈনিক আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে আদালতের প্রসিকিউশন শাখা থেকে জানানো হয়েছে যে, আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন ও সুমন দে‘কে গতকাল চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। একপর্যায়ে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে গত রোববার রোজী আক্তারকে পুলিশ আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালী থানার এসআই শরীফ উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, রোজী আক্তারকে গ্রেপ্তার করার পর জানতে পারি যে, তাকে আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন হলফনামা বানিয়ে দিয়েছেন। এরপর আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিনকে আমরা গ্রেপ্তার করি। তিনি জানিয়েছেন, সুমন দে‘র কাছ থেকে তিনি হলফনামা সংগ্রহ করেছেন। পরে আমরা সুমন দে‘কেও গ্রেপ্তার করি। সুমন দে আদালত পাড়ার আইনজীবী এনেঙ ভবন– ২ এর নিচে একটি দোকানে টাইপিস্ট এর কাজ করেন জানিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, তদন্ত এখনো বাকী রয়েছে। আসামিদের রিমান্ডে পাওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।
চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও বিচারকের নাম ব্যবহার করে জাল সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ভুয়া হলফনামা তৈরির অভিযোগে গত ১৮ মার্চ রোজী আক্তার নামের একজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলাটি দায়ের করেছিলেন চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির মো. আবুল কালাম আজাদ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নেজারত শাখায় রাফিউল আজিম নামে একজন আইনজীবী তার মোবাইলে রাখা একটি হলফনামার ৩টি ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পের ছবি নাজির আবুল কালাম আজাদকে দেখিয়ে বলেন, তিনি একই রকম একটি হলফনামা সম্পাদন করতে চান। তখন নাজির তার মোবাইলে প্রদর্শিত ৩টি ছবি দেখে ও পড়ে বুঝতে পারেন, হলফনামাটি চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সম্পাদিত না হলেও আদালত এবং চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের ৫টি সিল বানিয়ে জাল স্বাক্ষর দিয়ে হলফনামাটি বানানো হয়েছে। আবুল কালাম উক্ত হলফনামাটি রেজিস্টারের সাথে যাচাই করেন।
এতে দেখা যায়, জাল–জালিয়াতির মাধ্যমে বানানো হলফনামার ক্রমিক নং ১৩৮০/২৫, তারিখ ২৬/০২/২০২৫ এবং হলফকারী বিবাদী রোজী আক্তার হলেও প্রকৃত হলফনামা রেজিস্টারে ১৩৮০/২৫ ক্রমিকে হলফকারীর নাম রয়েছে মো. ইয়ামিন রহমান।
এজাহারে আরো বলা হয়, বিষয়টি বুঝতে পেরে নাজির আবুল কালাম আজাদ আইনজীবী রাফিউল আজিমের মোবাইলে রক্ষিত উক্ত ভুয়া হলফনামাটি তার মোবাইলে পাঠানোর জন্য বলেন। আইনজীবী রাফিউল নাজিরের হোয়াটসঅ্যাপে ছবিগুলো পাঠান। এছাড়া আইনজীবী রাফিউল আজিম জানান, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে উক্ত ভুয়া হলফনামাটি দাখিল করা হয়েছে এবং ওয়ারিশ সনদ সংক্রান্তে একই ধরনের হলফনামা সম্পাদনের জন্য তার মক্কেলকেও বলা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়, পরবর্তীতে উক্ত ভুয়া হলফনামার ছবিগুলো চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারকে দেখালে তিনি জানান, ওই হলফনামার সিল ও স্বাক্ষরগুলো তার নয়। প্রকৃতপক্ষে উক্ত বিবাদী রোজী আক্তার ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন পরস্পর যোগসাজসে সিটি কর্পোরেশনসহ অন্যান্য কাজে অবৈধ সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে জাল জালিয়াতির আশ্রয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৫টি ভুয়া সিল, বিচারকের ৩টি ভুয়া স্বাক্ষর ও ভুয়া ক্রমিক নম্বর ব্যবহার করে জাল হলফনামাটি তৈরি করেছেন।