যৌতুক দাবি ও যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পিতামাতার ভরণপোষণ সংক্রান্ত অভিযোগসহ আটটি বিষয়ে সরাসরি আদালতে মামলার সুযোগ থাকছে না। আদালতে মামলা দায়েরের আগে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের মধ্যস্থতার চেষ্টা করতে হবে। মধ্যস্থতায় মীমাংসা না হলে এবং মীমাংসাযোগ্য অপরাধ না হলে পরে সেটি আদালতে মামলা করা যাবে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটিসহ দেশের ১২টি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এ সংক্রান্ত বিধান কার্যকর করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে নতুন সরকারের অধ্যাদেশে এসব বিধান কার্যকর হচ্ছে। নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে রাঙামাটি, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা ও রংপুর জেলায় নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হচ্ছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে সরকারের আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ এর সংশোধন করে আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ পাস করা হয়। এ অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ আইনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংযোজন করা হয়। নতুন এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ আইনের ২১ এর (খ) ধারা সংযোজনের মাধ্যমে অধ্যাদেশের তফসিলে বর্ণিত ৯টির মধ্যে ৮টি মামলা (চেক ডিসঅনারের অভিযোগ ব্যতিত) বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান করা হয়েছে।
আটটি মামলা হলো– পারিবারিক আদালত আইনের ২০২৩ এর ৫–এ উল্লেখিত বিষয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ এ উল্লেখিত বিষয়, সহকারী জজ আদালতের এখতিয়ারভুক্ত বন্টন সম্পর্কিত বিরোধ, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন, ২০১৩ এর ধারা ৮ অনুসারে পিতামাতার ভরণপোষণ সম্পর্কিত বিরোধ, যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩ ও ৪–এ বর্ণিত যৌতুক সম্পর্কিত অভিযোগ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ধারা ১১ (গ)-এ বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন সম্পর্কিত অভিযোগ,State Acqquisition & Tenancy Act. 1950 Gi Section 96-এ উল্লেখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ এবং Non- Agricultural Tenancy Act. 1949 Gi Section24এর এ উল্লেখিত অগ্রক্রয় সম্পর্কিত বিরোধ।
এ সংক্রান্ত আটটি মামলার ক্ষেত্রে আগে বাদীপক্ষ চাইলে সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারতেন, কিন্তু বর্তমানে অধ্যাদেশের তফসিলে বর্ণিত আটটি মামলায় বাদীপক্ষ সরাসরি আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন না। এ সংক্রান্ত মামলার কারণ উদ্ভব বা পরিলক্ষিত হলে প্রথমে জেলা পর্যায়ে লিগ্যাল এইড অফিসে আপস মীমাংসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে মীমাংসা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার বাদী–বিবাদী পক্ষদের নিয়ে আপস–মীমাংসা সম্ভব হয়নি মর্মে প্রত্যায়িত একটা সার্টিফিকেট (সনদ) ইস্যু করবেন। এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বাদীপক্ষ পরবর্তীতে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
নতুন অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ আইনে ২১ (গ) ধারা সংযোজন করা হয়। অধ্যাদেশের আগে পক্ষদের বিরোধ সফলভাবে নিস্পত্তি হলে যে মধ্যস্থতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হতো সেটা পক্ষদের ওপর বাধ্যকর ছিল না। কোনো পক্ষ পরবর্তীতে এ চুক্তি অমান্য করলে অপরপক্ষ আদালতের মাধ্যমে কোনো প্রতিকার পেত না। ২১ (গ) ধারার মাধ্যমে পক্ষদের মধ্যে যদি বিরোধ মধ্যস্থতার মাধ্যমে সফলভাবে নিষ্পত্তি হয়, তবে চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার কর্তৃক প্রত্যায়িত মধ্যস্থতা চুক্তি পক্ষদের ওপর বাধ্যকর হবে। কোনো পক্ষ পরবর্তীতে চুক্তি অমান্য করলে অপরপক্ষ আদালতের মাধ্যমে উক্ত মধ্যস্থতার চুক্তির শর্ত পালন করার জন্য অপর পক্ষকে বাধ্য করতে পারবেন। মধ্যস্থতা চুক্তি আদালতের ডিক্রি বা আদেশ হিসেবে গণ্য হবে।
এছাড়াও নতুন অধ্যাদেশে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ আইনে ১৫ (ক) ও ২১ (ক) ধারা সংযোজন করা হয়। অধ্যাদেশের আগে প্রতিটি জেলায় সিনিয়র সহকারী জজ পদমর্যাদার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার মধ্যস্থতার কার্যক্রম সম্পাদন করতেন। এখন থেকে লিগ্যাল এইড অফিসারের পাশাপাশি চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার ও স্পেশাল মেডিয়েটর পদ সৃজন হয়েছে। সেক্ষেত্রে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের নতুন অর্গানোগ্রাম হচ্ছে; স্পেশাল মেডিয়েটর (অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদা), চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বা যুগ্ম জেলা ও দায়রা পদমর্যাদা) এবং লিগ্যাল এইড অফিসার।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ মো. আমানত উল্লাহ শাহিন আজাদীকে বলেন, আগে যৌতুক নিরোধ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পিতামাতার ভরণপোষণ বিরোধ বিষয়গুলো নিয়ে আদালতে মামলা হতো। সরকার ৮টি বিষয়ে আইন সংশোধন করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চালু হচ্ছে এই সেবা। এছাড়া আমাদের জেলা পর্যায়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের অর্গানোগ্রামেও পরিবর্তন এসেছে। এখন নতুন করে স্পেশাল মেডিয়েডর ও চিফ লিগ্যাল এইড অফিসার পদ সৃজন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগে সরাসরি আদালতে মামলা দায়েরের কারণে অনেকক্ষেত্রে ভুয়া মামলা দায়েরের কারণে অনেকেই হয়রানির শিকার হতেন। আবার অনেককে ছোটখাটো বিষয় নিয়েও আদালতে ঘুরতে হতো। এখন নতুন সেবা কার্যক্রম চালুর মাধ্যমে জনসাধারণের হয়রানি কমবে। অনেক বিষয় লিগ্যাল এইড অফিসেই সমাধান করা যাবে। আমাদের কাছে আপস মীমাংসা না হলে সেক্ষেত্রে আমরা একটি প্রত্যায়িত পত্র দেব, সেটির প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে আদালতে মামলা দায়ের করা হবে। তবে এই আটটি মামলার ক্ষেত্রে কেউ চাইলে থানায়ও মামলা করতে পারবেন না। কিন্তু আদালতে মামলা করতে হলে নতুন অধ্যাদেশ অনুসরণ করেই করতে হবে।












