আইএফবি নোটিশে ছিল না সিআরবির নাম

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৯ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে রেলওয়ের জায়গায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) ৫০০ শয্যার হাসপাতাল এবং ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আহূত ইনভাইটেশন ফর বিড (আইএফবি) নোটিশে সিআরবির নাম ছিল না। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত ওই নোটিশ আহ্বানের পরে কৌশলে সিআরবিতে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটি ঢোকানো হয়েছে। সিআরবির মতো হেরিটেজ অ্যান্ড কালচার ঘোষিত জায়গায় এই ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা দেশের সংবিধানের লংঘন বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এটি একটি ক্রিমিনাল অফেন্স। তাদেরকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
জানা যায়, চট্টগ্রামে রেলওয়ের জায়গায় পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে ৫শ শয্যার হাসপাতাল এবং ১শ আসনের মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় বেশ আগে। পিপিপির আওতায় বড় পরিসরে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে ইনভাইটেশন ফর বিড নোটিশ আহ্বান করে। রেলওয়ের এডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ব্রিজ) এবং প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা স্বাক্ষরিত ওই ইনভাইটেশন ফর বিড নোটিশে সিআরবির নাম ছিল না। চট্টগ্রামে রেলের যেকোনো জায়গায় ৫শ বেডের হাসপাতাল এবং ১শ আসনের মেডিকেল কলেজ করার ব্যাপারে বিনিয়োগকারী আহ্বান করা হয়েছিল ওই নোটিশে। ওই নোটিশের প্রেক্ষিতে ইউনাইটেডের সাথে চুক্তি করা হলো। যেখানে সুকৌশলে সিআরবির ছয় একর জায়গা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, সিআরবির নাম কী করে, কারা এখানে যুক্ত করল, কীভাবে মন্ত্রণালয় চুক্তি করল, তার তদন্ত হওয়া দরকার। চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট বাবুল আজাদীকে বলেন, পূর্বাঞ্চল রেলের সদর দপ্তর বা সিআরবিকে ২০০৮ সালে প্রকাশিত গেজেট প্রজ্ঞাপন অনুসারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী জায়গা (হেরিটেজ) হিসেবে ঘোষণা করেছে। সিডিএর মাস্টার প্ল্যানেও জায়গাটি হেরিটেজ অ্যান্ড কালচার হিসেবে চিহ্নিত। এতে করে আইনগতভাবে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত জায়গার আকৃতি প্রকৃতি পরিবর্তন করা বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক ও ২৪ অনুচ্ছেদ কর্তৃক সংরক্ষিত বিধায় পরিবর্তন করা যাবে না।
সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন। অপরদিকে ২৪ অনুচ্ছেদে বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
তিনি বলেন, সিআরবি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের সংঘটিত কর্মকাণ্ডে সংবিধানের এই দুটি ধারা লংঘিত হয়েছে। ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর আহূত আইএফবি নোটিশে কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান উল্লেখ না থাকা সত্ত্বেও কার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য সিডিএর আইন লংঘন করা হলো, সেটি একটি বড় রহস্য।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৮ সালে সিআরবিকে প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করার তথ্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অবগত ছিল। অথচ এই তথ্য গোপন করে সিআরবিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া ক্রিমিনাল অফেন্স। সিআরবি এলাকাটি দ্য প্রটেকশন অব দ্য ওয়ার্ল্ড কালচারাল অ্যান্ড ন্যাচারাল হেরিটেজ কনভেনশন ১৯৭২ অনুযায়ী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত এলাকার অধিভুক্ত। এছাড়া সিআরবি এলাকাটি দ্য এন্টিকুইটি অ্যাক্ট ১৯৬৮ (পুরাকীর্তি আইন) এর বিধান অনুযায়ী বিশেষায়িত এলাকা। এই ধরনের একটি বিশেষায়িত জায়গায় হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার কোনো সুযোগ নেই।
অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, চট্টগ্রামবাসী হাসপাতাল চায়। ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বরের আইএফবি নোটিশ অনুযায়ী রেলওয়ের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের যেকোনো জায়গায় হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু কোনোমতেই সেটি সিআরবিতে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ নেই। বিদ্যমান সংকট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র হজ আজ
পরবর্তী নিবন্ধফকির আলমগীর লাইফ সাপোর্টে