চাটগাঁইয়া ক’তার বৈডক আর চাটগাঁর ঐতিহ্যের গান’র উৎসব। আঁরার চাটগাঁ অর্থাৎ আমাদের চট্টগ্রাম-এর ৭ম প্রতিষ্ঠবার্ষিকীতে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বেজে উঠেছিল অন্যরকম সুর। চাটগাঁইয়া গান’র দল-এর পরিবেশনায় তা আরো পূর্ণতা পায়। অনুষ্ঠানে ছিল চাটগাঁইয়া আবৃত্তি, একক সংগীত, দলীয় সংগীত ও নৃত্যসহ নানা আয়োজন।
বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হয় চাটগাঁইয়া আড্ডা। চাটগাঁইয়া কথার বৈঠকে অংশ নেন ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সচিব জামাল উদ্দীন আহমেদ, জেলা পরিষদের প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুস সালাম, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ ও সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পী শাহরিয়ার খালেদ।
অতিথিরা বলেন, মেজ্জান, বলীখেলা, সাম্পান, শুঁটকি, বেলা বিস্কুট, লবণ-এই শব্দগুলো এখন শুধু ঐতিহ্য বহন করে না, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ইতিহাস, লোকজ সংস্কৃতির অংশও বটে। আজ থেকে ৪শ বছর আগে এই চট্টগ্রামেই যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয়েছিল। এখান থেকে যুদ্ধজাহাজ গেছে জার্মানিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। আজ তারা উন্নতির চরম শিখরে। আমাদের জানতে হবে নিজের অতীত। নতুন প্রজন্মকে এই ইতিহাস জানাতে হবে। আমরা সেই জাতি যারা বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আবারও দাঁড়াতে হবে।
বক্তারা আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধত্থুন শুরু গরি টাইমে টাইমে এই বাংলাদেশর মেডিত আঁরার চিটাং গর্জি উইঠ্যি। আরার চিটাংঅর মেডি হাজার বিপ্লবীর আঁতুড় ঘর।
তারা বলেন, ও ভাই আঁরা চাটগাঁইয়া নওজোয়ান/ দইজ্জার কুলত বসত গড়ি/ শিনা দি ঠেহাই ঝড় তোয়ান…। আঁরা চাটগাঁইয়া-এ শব্দ দুটির মধ্যে আবেগ জড়িয়ে আছে। গান্ধী বলেছিলেন, চিটাগাং টু দি ফোর। অর্থাৎ সবার আগে এগিয়ে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম একশ বা দুইশ বছরের কোনো শহর নয়। এটি হাজার বছরের পুরনো নগর। কৃষ্টি, বৈচিত্র্য ও সাংস্কৃতিক সম্পদে চট্টগ্রাম অতুলনীয়। সমুদ্র তীরবর্তী চট্টগ্রাম চিরকালই ঝড়-তুফান-জলোচ্ছ্বাস কবলিত অঞ্চল। এখানকার মানুষকে লড়াই করতে হয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম, ভাষা ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামে, জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে, মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের মানুষের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা আজ ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। ইতিহাস চট্টগ্রামকে চিহ্নিত করেছে বিপ্লবতীর্থ হিসাবে।
প্রসঙ্গত, পরিসংখ্যান মতে, প্রায় দেড় কোটি মানুষ চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে, যা বিশ্বের ৮৮তম বৃহত্তম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ও সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত চট্টগ্রামবাসীর মধ্যে সেতুবন্ধন রচনায় ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় আঁরার চাটগাঁ-আমাদের চট্টগ্রাম-ঙঁৎ ঈযধঃঃড়মৎধস নামের ফেসবুক গ্রুপ। এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা এখন প্রায় ১ লাখ। এই ব্যানারে নগরে কয়েকটি মিলনমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে ছিল চান্নি ফইজ্জা খোয়াভাতি, দেশ দুইন্নাই ঘুইজ্জম ছিন-ছিনারি ছাইউম ও ফঅন মাইস্যা পূর্ণিমায় কর্ণফুলীর কিনারায়।