আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথে রোমাঞ্চকর তাজিংডং

যেভাবে যাবেন দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গে

আলাউদ্দীন শাহরিয়ার, বান্দরবান | শনিবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৪:১৩ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের ভাষায় ‘তাজিং’ শব্দের অর্থ বড় এবং ‘ডং’ শব্দের অর্থ পাহাড়। এই দুটি শব্দ থেকে তাজিংডং পর্বতের নামকরণ। সরকারিভাবে এটি তাজিংডং বিজয় নামে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। তাজিংডং বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার রেমাক্রী পাংশা ইউনিয়নে সাইচল পর্বতসারিতে অবস্থিত। এটি রুমা সদর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। তবে থানচি উপজেলা সদর থেকে বাকলাই সীমান্ত সড়কপথে মাত্র ২২ কিলোমিটার দূরত্বে। খুব সহজেই থানচি থেকে যাওয়া যায়। সরকারি হিসেবে তাজিংডং পর্বতের উচ্চতা ১,২৮০ মিটার বা ৪১৯৮.৪ ফুট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত।

স্থানীয় মংব্রাচিং মারমা বলেন, থানচি সদর থেকে সীমান্ত সড়কপথে চান্দের গাড়ি অথবা মোটরসাইকেল যোগে ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগে তাজিংডং বিজয় পাহাড়ের কাছাকাছি মূল সড়কে পৌঁছাতে। সীমান্ত সড়কের ২২ কিলোমিটার পয়েন্ট থেকে ৩০/৪০ মিনিটের পায়ে হাঁটার পথ। সীমান্ত সড়কটি পর্বত চূড়া তাজিংডং ভ্রমণটি সহজ করে তোলায় ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড় আগের চেয়ে বেড়েছে। তবে বর্ষাকালে তাজিংডং পাহাড় ভ্রমণ বিপজ্জনক।

স্থানীয় ট্যুরিস্ট গাইড সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ বলেন, তাজিংডং ভ্রমণে যাবার পথেই দেখা মিলে বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর গ্রাম। পাহাড়ের মানুষের সংস্কৃতি এবং জীবন বৈচিত্র্য প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠা। একটা সময়ে তাজিংডং বিজয় পর্বতে পৌঁছানো দুরুহ হলেও বর্তমানে প্রচুর পর্যটক প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে আসেন। শুধু তাজিংডং নয় প্রকৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়ে আছে আশেপাশেও। তাজিংডং চূড়া থেকে সাকা হাফং পর্বত দেখা যায়। সাকা হাফং পর্বতের এক পাশে বাংলাদেশ, আরেকপাশে মিয়ানমার। পর্যটকের সংখ্যা থানচিতে আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।

বেড়াতে আসা পর্যটক হুমায়রা মিম, সাব্বির সজিব বলেন, চিম্বুকের পর থেকে সীমান্ত সড়কের তাজিংডং পাহাড় চূড়া ভ্রমণের ২২ কিলো পয়েন্ট পর্যন্ত সড়কপথের ভ্রমণটি অ্যাডভেঞ্চারপূর্ণ দারুণ রোমাঞ্চকর। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে ওপরের দিকে যতই উঠা যায়, ততই মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে। কখনো আকাশের দিকে উঠতে থাকে তো আবার কখনো নিচে নামতে থাকে। মাঝেমধ্যে পাহাড়ের বাঁকে খুব সামনের পথও দেখা যায় না। মনে হয়, এই বুঝি পাহাড়ের খাদে পড়ে যাচ্ছি। পাহাড় কেটে বানানো রাস্তা নিচের দিকে তাকালে গা ছমছম করে, এতটা নিচে যে কিছুদূর পর আর দেখায় যায় না মেঘের কারণে। শুধু পাহাড় আর পাহাড়। পাহাড়গুলো মেঘের চাদরে ডাকা, মেঘ পাহাড়ের সে কী অলিঙ্গন। এগারো জনের একটি টিম আমরা ঢাকা ঘুরতে এসেছি, রোমাঞ্চে ভরপুর ভ্রমণটি সারাজীবন মনে থাকবে সবার।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহআলফয়সাল বলেন, থানচিতে পর্যটকদের আরামদায়ক এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সম্মিলিতভাবেই কাজ করছে। থানচিতে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। তাজিংডং পাহাড় চূড়া দর্শনের পথটি বর্তমানে অনেক সহজ হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত নদীপথে রেমাক্রী তিন্দু এবং সড়কপথে তমা তুঙ্গী পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি রয়েছে সরকারিভাবে। খুব শীগ্রই অন্য দর্শণীয় স্থানগুলোও ভ্রমণের জন্য খুলে দেয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপটিয়ায় ঈগল-সৌদিয়া পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, চালক নিহত, আহত ৪০
পরবর্তী নিবন্ধ১০ বছর বয়সে হাফেজ