কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে জাতীয় পর্যায়ে প্রয়োগ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা কোভিশিল্ড নামে পরিচিত এই ভ্যাকসিনের মজুদ আছে আর মাত্র চার লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭ ডোজ। এই এক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো স্থান থেকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন পাওয়া না যায় তবে খুব দ্রুতই দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে। তাতে অনন্যোপায় হয়ে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ১৬ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য আবেদন জানিয়েছে সরকার। তবে সেই আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে তারা।
সম্প্রতি বাংলাদেশে চীন থেকে পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন এলেও সেটি পূর্বে নিবন্ধিতদের দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছেন ভ্যাকসিন আসলে খুব দ্রুতই যারা বাদ পড়ছেন তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রয়োগ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার সারাদেশে ৫৩ হাজার ৯১৫ ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। সারাদেশে এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৩৯ লাখ ৩০ হাজার ৭৫১ জন। দেশে জাতীয়ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু পর থেকে প্রথম ডোজের ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। বাংলাদেশে ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহীদের মাঝে নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, এ দিন দেশের রাঙামাটি, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়ায় ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে দেশে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন ধাপে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি দুই লাখ চার হাজার ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায়।
এখন পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন। যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের মাঝে এখনও ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৬১ জনের দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন নেওয়া বাকি। গাণিতিক হিসেবে ভ্যাকসিনের মজুদ হিসেবে এদের মাঝে চার লাখ ৫৩ হাজার ৩৩৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পাবে না প্রথম ডোজ পাওয়া ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৪ জন।
রাজধানীর বিভিন্ন ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন কবে আসবে তেমন কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় আপাতত কার্যক্রম স্থিমিত আকারে চালানো হচ্ছে। তবে যদি ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমএনসিঅ্যান্ডএইচ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন আছে তা যদি দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার ডোজ করে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে আরও সাত আটদিন চালানো যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে এটার সংখ্যা যদি বাড়ে তবে আরও আগে শেষ হবে। কারণ সবস্থানে কিন্তু ভ্যাকসিন প্রয়োগ একই মাত্রাতে হয় না। সুতরাং রেশনিং করে যতদিন চালানো যায় ততদিন চালানো হবে।
এ দিকে খুব দ্রুত ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের ঘাটতি পূরণে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। ভারতের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন। একই সময় তিনি উপহার হিসেবে হলেও ভ্যাকসিন দেওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।
যুক্তরাজ্যের কাছে টিকার আবেদন : ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় তৈরি হওয়া সংকট মেটাতে যুক্তরাজ্যের কাছে জরুরি ভিত্তিতে টিকা সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যের টেলিভিশন আইটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের টিকা পরিস্থিতিকে সংকট আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, টিকা পেতে আমরা মরিয়া।
মারাত্মক সংক্রামক নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। ফলে আগাম মূল্য পরিশোধ করেও বাংলাদেশ আপাতত ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুত করা টিকা পাচ্ছে না। সংকট নিরসনে বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে ঢাকা। এই পরিস্থিতি নিয়ে আইটিভির সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত ভয়ংকর সময় পার করছে। দেশটির করোনা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। আমরা এই পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। ফলে তারা যে পরিমাণ টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।
ভারত টিকা রফতানি বন্ধ রাখায় বাংলাদেশ ১২ সপ্তাহের মধ্যে ১৬ লাখ মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে ব্যর্থ হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইটিভিকে বলেন, প্রয়োজনীয় ডোজ পেতে সরাসরি ব্রিটিশ সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে সক্ষমতা না থাকায় ব্রিটিশ সরকার ওই আবেদন ফিরিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি (ব্রিটিশ) সরকার চেষ্টা করলে, তারা এটা দিতে পারবে, কারণ তাদের সামর্থ রয়েছে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ সরকারের কাছে আমার বার্তা হলো তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। কমনওয়েলথ সদস্য দেশকে তাদের সাহায্য করা উচিত।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের যুক্তরাজ্যের ভালো বন্ধু… আর বহু বাংলাদেশি যুক্তরাজ্যে অবদান রাখছে…ফলে যুক্তরাজ্যের এগিয়ে আসা উচিত। আমরা খুব বেশি চাইছি না, আমি কেবল তাদের কাছে থাকা ১৬ লাখ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চাইছি। তাদের উচিত অবিলম্বে টিকাগুলো বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া যাতে করে মানুষ দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেতে পারে।