অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের অভূতপূর্ব সাফল্যে অভিনন্দন জানাই

চিকিৎসাসেবায় আস্থা ফেরাতে হবে

| রবিবার , ১ জুন, ২০২৫ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের অভূতপূর্ব সাফল্যে অভিভূত হলেন নগরবাসী। চট্টগ্রামে এই প্রথম আলাদা হলো জোড়া লাগা শিশু। ৩ ঘণ্টার জটিল সার্জারিতে ৮ জন বিশেষজ্ঞ সার্জনসহ ১৮ জনের টিম অংশ নেয়। জন্মের সময় বাচ্চাদের ওজন ছিল যথাক্রমে ৯৭৩ ও ১০৪৫ গ্রাম, বর্তমানে তাদের ওজন রয়েছে১২৫৫ ও ১৩৫০ গ্রাম। জানা গেছে, এটি বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ যমজ জোড়া লাগা বাচ্চার সার্জারি হলেও চট্টগ্রামে এটাই প্রথম।

গত বৃস্পতিবার বিকেলে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক বলেন, অপারেশনের পর বাচ্চা দুটি সুস্থ আছে। চট্টগ্রামে বিশ্বমানের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে এই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বাচ্চা দুটি সুস্থভাবে বাঁচাতে পারলে আমাদের সে প্রচেষ্টা সফল হবে বলে মনে করি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিদ নবী বলেন, জোড়া লাগা বাচ্চার সার্জারি চট্টগ্রামের মধ্যে এর আগে কেউ চিন্তা ভাবনা করেছেন কিনা আমি জানি না। আল্লাহর রহমতে, গত কয়েকবছরে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট, আমি গর্বের সাথে বলতে পারি, শুধু চট্টগ্রামে নয়, বাংলাদেশে অন্যতম সেরা একটি ডিপার্টমেন্ট। আজকে আমরা যে জটিল সার্জারি সম্পন্ন করতে পেরেছি, এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অ্যাপোলো ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আদনান ওয়ালিদ বলেন, এই সার্জারিতে আমরা যে জটিলতার মুখোমুখি হয়েছিসেটি হচ্ছে এটি আমাদের প্রথম অভিজ্ঞতা। কারণ এই রোগীকে আলাদা করার ফ্যাসিলিটিগুলো রেডি করা, টিম রেডি করা এটি একটি চ্যালেঞ্জ। সবচেয়ে বড় বিষয় ছিলবাচ্চার বাবা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন, আমরা এখানে এটি করতে পারবো। আর চট্টগ্রামের জন্যই এটি একটি অর্জন। হাসপাতালের গাইনোকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেশমা শারমিন বলেন, গাইনোকোলজি বিভাগে ভর্তির পর যমজ বাচ্চার পজিশন দেখে সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই। যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে একটি বাচ্চা বের করে আনি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বাচ্চাটি বের করি। কিন্তু এই বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রথম বাচ্চা বের করতে গিয়ে দেখা যায় বাচ্চা দুটি জোড়া লাগানো। বিষয়টি আমরা বাচ্চার পরিবারের সাথে শেয়ার করি। অবশেষে আমরা বাচ্চা দুটির সফল ডেলিভারি করতে সক্ষম হই। এমনিতে যমজ বাচ্চা কমপ্লিকেটেড (জটিল)। তার উপর এখানে বাচ্চা দুইজনের বুক জোড়া লাগানো।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রামে নেই কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল। হার্ট, কিডনি, লিভার, বার্ন চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সেবার জন্য রাজধানীতে আলাদা আলাদা হাসপাতাল থাকলেও সরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য একমাত্র অবলম্বন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সকল ধরনের রোগীকে সেখানেই ছুটতে হয়। এতে সীমিত সক্ষমতার হাসপাতালটির ওপর চাপও বেশি। জটিল বিভিন্ন ধরনের রোগের জন্য পৃথক পৃথক বিশেষায়িত হাসপাতাল গড়ে তোলা চট্টগ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সে হিসেবে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দাবি কিছুটা পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া হলো।

তাঁরা বলেন, সক্ষমতার চেয়েও ১০ গুণ বেশি রোগী আসে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এতে যে চাপ তৈরি হয়, তাতে সবসময় সেবার মান ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। তবে আমাদের চিকিৎসা সেবার সঙ্গে জড়িতদের আরো বেশি আস্থা অর্জন করতে হবে। তাঁরা বলেন, রোগীদের ধৈর্য বাড়াতে হবে, সহনশীল মনোভাব এবং মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে এবং চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোরও দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। এ প্রসঙ্গে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের সাফল্যে চট্টগ্রামবাসী অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। আমরা এই সাফল্যের জন্য অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের প্রতিটি কর্মীকে অভিনন্দন জানাই।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় গত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত আধুনিকায়ন হলেও রোগীদের আস্থা বাড়েনি। ভুল রোগ নিরীক্ষা, বিশেষায়িত চিকিৎসা না পাওয়া, প্রতারিত হওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। দেশে চিকিৎসা ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেলেও রক্ষা হচ্ছে না রোগীর অধিকার। তাঁরা বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষের উচিত দেশের প্রতিটি হাসপাতালে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। চিকিৎসকদের সব সুবিধা নিশ্চিত করে রোগীদের যথাযথ সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করাও দরকার।

পত্রিকায় প্রকাশিত এক তথ্যে জানা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছেন। এত হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। আস্থার সংকট থেকেই চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা বিদেশমুখী হচ্ছেন। হারানো এ আস্থা আমাদের ফেরাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে