নগরীর পাঁচলাইশের ষোলশহর ২ নম্বর গেইট ট্রাফিক পুলিশ বক্সে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও ৬ নব্য জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। গ্রেপ্তার ছয় সদস্য হলেন মহিদুল আলম (২৪), মো. জহির উদ্দিন (২৮), মো. মঈন উদ্দিন (২০), মো. আবু সাদেক (১৯), রহমত উল্লাহ আকিব (২৪) এবং মো. আলাউদ্দিন। তাদের সবার বাড়ি লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসিফ মহিউদ্দীন জানান, বুধবার (গতকাল) ভোরে মহিদুল ও জহিরকে বান্দরবান জেলা শহরের কলাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকা থেকে এবং বাকি চারজনকে লোহাগাড়া উপজেলার দরগাহমুড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনায় আমরা ঘটনাস্থলের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্ত করি। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ছয়জনই পুলিশ বক্সে বোমা বিস্ফোরণে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে সাদেক বোমাটি পুলিশ বক্সের ভেতরে রেখে আসেন। আকিবের বোমা তৈরিতে বিশেষ প্রশিক্ষণ আছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার নব্য জেএমবির ৬ সদস্য বুধবার বিকেলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান, সফি উদ্দিন ও সরোয়ার জাহানের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি গ্রহণের পর আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে সংগঠনের আদর্শ বাস্তবায়ন ও শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয়ভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এছাড়া অনলাইনে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটায় পুলিশ বক্সে বোমা হামলার ঘটনাকে প্রথমে বৈদ্যুতিক গোলযোগের বিস্ফোরণ ভাবা হলেও তদন্তে উঠে আসে এটি ছিল বোমা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণে কমপক্ষে পাঁচজন আহত হন, যাদের মধ্যে দুজন সেখানে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য। এরা হলেন, সার্জেন্ট আরাফাত হোসেন ও এএসআই মো. আতাউদ্দিন। এছাড়া ১০ বছরের এক শিশু এবং আরও দুজন যুবক আহত হন। বোমা হামলার পরদিন ট্রাফিক পরিদর্শক অনিল বিকাশ চাকমা বাদী হয়ে পাঁচলাইশ মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় ইতঃপূর্বে জেএমবির ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা প্রত্যেকেই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন এবং আদালতের আদেশে সবাই কারাগারে আছেন। এদের সবার বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। পুলিশ বক্সে হামলার ঘটনায় হামলার সঙ্গে সরাসরি ৭ জনের জড়িত থাকার তথ্য পায় তদন্ত সংস্থা। তবে তাদের গ্রুপে ১৫ জন সদস্য অন্তর্ভুক্ত বলেও জানা গেছে।
আদালতে স্বীকারোক্তি : মহিবুল আলম ও মাঈনুদ্দিন আদালতে জানিয়েছেন, তারা বোমা ও আইইডি তৈরির বিভিন্ন ভিডিও আদান-প্রদান করতেন। সেই অনুসারে স্থানীয়ভাবে মালামাল সংগ্রহ করে বোমা ও আইইডি তৈরি করা হত। এদিকে গ্রেপ্তার নব্য জেএমবি বাকি চার সদস্যের মধ্যে মো. জহির উদ্দিন (২৮), রহমত উল্লাহ প্রকাশ আকিব (২৪) ও মো. আলাউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বাকি সদস্য আবু সাদেককে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।