অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অপব্যবহার বন্ধ হোক

করোনার চেয়েও বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি

| রবিবার , ২৯ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের কারণে ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য অণুজীব ক্রমেই বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। জীবাণুর এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন বা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের কারণে বর্তমানে বিশ্বে প্রতিবছর সাত লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধ করা না গেলে এবং কার্যকর নতুন অ্যান্টিবায়োটিক না এলে এই মৃত্যু বছরে এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। সেই আশঙ্কা থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আগামী প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিকের প্রাপ্যতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমন্বিত গবেষণা ও বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, অন্যথায় বিশ্বকে করোনা মহামারির চেয়েও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে হতে পারে। শুক্রবার রাতে গণভবন থেকে ভিডিও সংযোগের মাধ্যমে ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স এর যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে কো-চেয়ারের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতিসংঘের খাদ্য, কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিম্যাল হেলথের উদ্যোগে বৈশ্বিক এই প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠেছে।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৫৬ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যকারিতা হারিয়েছে। অর্থাৎ এরা রোগ জীবাণুতে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোনো কাজ হবে না। তাহলে এসব মানুষ জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে তাদের সারানো হবে কিভাবে? সেই সঙ্গে আছে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার। এসব প্রাণীর মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরেও চলে আসছে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক। ফলে জীবাণুগুলো ক্রমেই বেশি করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, মানব শরীরে অপরিমিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রবেশের ফলে মানুষের কিডনি, লিভারসহ বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিকের এমন অপব্যবহার রোধ করতেই হবে। পাশাপাশি অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে। কারণ অধিক কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত বাজারে না এলে মানবজাতিকে অনেক বেশি মূল্য চুকাতে হবে। একই সঙ্গে অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধগুলো যেন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, তা-ও নিশ্চিত করতে হবে।
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ওষুধের মান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই এমন বহু ওষুধ কোম্পানি আছে, যাদের তৈরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে কম বা দুর্বল ওষুধ জীবাণুকে ধ্বংস করতে পারে না। বরং জীবাণুক্রমে সেই ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। সেদিক থেকে ওষুধের মান যাচাই ও নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। বাজারে থাকা বা বাজারে আসা মানহীন জীবাণুনাশী ওষুধ খুঁজে বের করে সেগুলো তুলে নেওয়ার মতো সক্ষমতা রাষ্ট্রের থাকতে হবে। আবার বাংলাদেশের মতো অনেক দেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কেনা যায়। এটিও জীবাণুগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের বড় কারণ। এক্ষেত্রে ভোক্তা, ওষুধ বিক্রেতা, এমনকি চিকিৎসকদের মধ্যেও সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই, মানবজাতিকে রক্ষায় দ্রুত অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বনেতাদের আরো আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ২৫ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬