কারো অসুখ–বিসুখে একটি শব্দ সবার কাছে শোনা যায়। সেই শব্দটি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। সামান্য জ্বর সর্দি কাশি হলেই আশপাশের ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। তবে আমরা কখনো চিন্তা করি না সামান্য অসুস্থতা বোধ করলেই যে অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ সেবন করা কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ? আমরা অনেকে মনে করি অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়, অসুস্থতা যতই সামান্য হউক বা জটিল।
সমপ্রতি চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাশাপাশি জ্বর হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম লক্ষণ। তবে তা ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে আদতে এটি ডেঙ্গু জ্বর কিনা। অনেক সময় দেখা যায় সামান্য জ্বর হলেই কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নেয় অনেকে। অথচ ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট মশায় ছড়ায়। ডেঙ্গু জ্বরের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা নেই। অথচ অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া কোনো কাজে আসছে না বরং শরীরের দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা তৈরী হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনোভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার সুযোগ নেই। অথচ বাংলাদেশের ফার্মেসিগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। আইন থাকলেও দৃশ্যমান প্রয়োগ নেই। এমবিবিএস ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসি দোকানদারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অসচেতন ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলো। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে। তবে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা শুরু করলেও মাঝপথে গিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করে না। আর এভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ে বা তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই সবার মুখে শোনা যায়, এখন অ্যান্টিবায়োটিকেও কাজ করছে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাত্রা অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন এবং সঠিক নিময়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন না করায় দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ১৮ থেকে ২৪ নভেম্বর অ্যান্টিবায়োটিক সপ্তাহ পালন করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে আমরা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল পরবর্তী যুগে প্রবেশ করবো। যেখানে মানুষ আরও বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকবে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন জানান, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে জনগণ কার্টুন বা ভিডিও প্রদর্শনীর মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার যে, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। ফার্মেসিতে যাতে অবাধে ঐ ওষুধ বিক্রি করতে না পারে সে জন্য অ্যাকশনে যাওয়া দরকার।
সিভিল সার্জন কার্যালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারেন। আমি অনেক দেশে গিয়েছি সেখানে দেখেছি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করে না। আমাদের বাংলাদেশে ন্যাশনাল গাইডলাইন আছে কিন্তু ফলো করা হয় না। অ্যান্টিবায়োটিক সেবন দুইভাবে আমাদের শরীরে ইফেক্ট করতে পারে। প্রথমত অপ্রয়োজনী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার। দ্বিতীয়ত আমরা দেখি রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তাররা রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পর রোগী কিছুটা সুস্থতার হলে আর ওষুধ সেবন করে না বা কোর্স সম্পন্ন করেন না। যার কারণে শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করা দরকার। ডাক্তারের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যাতে কোন অ্যান্টিবায়োটিক ফার্মেসিতে বিক্রি করতে না পারে সে জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের কোন সুযোগ নাই। জাতীয় পর্যায় থেকে বলে আছে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সর্তক হওয়ার জন্য। আমরা তৎপর রয়েছি। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। আর ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসিতে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার নিয়ম নাই। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও জেলা প্রশাসনকে সাথে নিয়ে হাজারী গলিসহ বিভিন্ন ওষুধের দোকানগুলো সতর্ক করেছি। আমাদের পোস্ট গ্যাজুয়েশন ডাক্তার যারা রয়েছেন তারা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সজাগ রয়েছেন।
অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স যাতে না হয় সে জন্য ফার্মেসি, পল্লী ডাক্তারসহ সকলকে সতর্ক করছি আমরা। বিভিন্ন সেমিনার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকলকে সর্তক করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।