অ্যান্টার্কটিকার রহস্যময় ব্লাড ফলস

তাজওয়ার করিম | বুধবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

অ্যান্টার্কটিকার টেইলর গ্লেসিয়ারের পাদদেশ থেকে ধীরেধীরে লালচে তরল ঝরছে দেখে মনে হয় যেন বরফ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। নামেই আছে ভৌতিকতার ছোঁয়া: ব্লাড ফলস। কিন্তু এই লাল রং রক্ত নয়; এটি লৌহসমৃদ্ধ লবণাক্ত পানির কারণে ঘটে, যা বাতাসে এসে আয়রণ অক্সির্ডাইজড করলে মরিচার মত রঙ তৈরি হয়।

এই জলধারা আসলে গ্লেসিয়ারের নিচে সিল্ড হয়ে থাকা প্রাচীন এক লবণাক্ত জলাশয় (হ্রদ) থেকে বেরিয়ে আসে। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী এ জলাশয় ২ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে বরফের নিচে আটকা ছিল অতিরিক্ত লবণ এবং ভূগর্ভস্থ’ তাপের কারণে পানি হিমে পরিণত হতে পারেনি। ফলে আজো বরফের ফাঁক দিয়ে লবণাক্ত, লৌহসমৃদ্ধ জল ধীরে ধীরে উপরে আসে।

আর সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার এই অক্সিজেনবিহীনলবণাক্ত জলে দেখা মিলে অণুজীবের। সূর্যালোকের অনুপস্থিতিতে তারা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে (আয়রন ও সালফেট ইত্যাদি ব্যবহার করে) শক্তি সংগ্রহ করে; অর্থাৎ জীবন এমন কঠোর পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম যা অ্যাস্ট্রোবায়োলজির দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। ইউরোপা বা এনসেলাডাসের মতো বরফময় চাঁদে (বৃহস্পতি গ্রহের) জীবন খোঁজার জন্য ব্লাড ফলস একটি প্রাকৃতিক পরীক্ষাগার।

১৯১১ থেকে বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এ ঘটনাকে লক্ষ করেছেন, আর রাডার ও রাসায়নিক বিশ্লেষণে আজও নতুন তথ্য মেলে চলেছে। ব্লাড ফলস মানুষের কৌতূহল জাগায়: প্রাকৃতিক কত ফেনোমেনা এখনো আমাদের অজানা । একটি ছোটো লাল দাগ কিন্তু তা দিয়ে আরেকটা বড় প্রশ্ন উঠে আসে: পৃথিবীর বাইরেও কি জীবন সম্ভব, এমনকি সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশেও?

পূর্ববর্তী নিবন্ধবর্ণমালার বর্ষাদিন
পরবর্তী নিবন্ধশহীদুল ইসলাম ফরহাদের ইন্তেকাল