মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অপারেশন থিয়েটারের জন্য চিকিৎসক, নার্স, আয়া সবাই আছেন। শুধু নেই একজন অ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ)। তিন মাস ধরে এ পদ শূন্য থাকার ফলে প্রসূতিসহ সবধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ। বাধ্য হয়ে রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ছয় মাসে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৪৮ জন শিশুর জন্ম হয়। এদের মধ্যে ৩৯১ জন স্বাভাবিকভাবে ও ৫৭ জন নারীকে জরুরি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। মাসে গড়ে ৮–১০ জন গর্ভবতী নারীর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন পড়ে।
জানা যায়, গত ৫ জুলাই পদোন্নতি পেয়ে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যান মীরসরাই হাসপাতালের একমাত্র অ্যানেসথেটিস্ট। এরপর এ পদে অদ্যাবধি আর কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম চালু থাকলেও প্রসূতিদের জরুরি অস্ত্রোপচার সেবা বন্ধ আছে। একই সঙ্গে বন্ধ আছে ছোটখাটো সব অস্ত্রোপাচার কার্যক্রম। কমপ্লেক্সে অস্ত্রোপচার সেবা নিতে একজন প্রসূতির খরচ মাত্র আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। কিন্তু এ সেবা বন্ধ থাকায় কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা হতদরিদ্র পরিবারগুলো পড়েছে বিপাকে। তাদের বাধ্য হয়ে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রসূতি অস্ত্রোপচার করাতে খরচ করতে হচ্ছে ২০–৩০ হাজার টাকা। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে আরও বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে।
হিঙ্গুলী ইউনিয়নের পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামের বাসিন্দা আমির হোসেন বলেন, কয়েকদিন আগে আমার স্ত্রীকে নরমাল ডেলিভারির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। মা ও বাচ্চার অবস্থা ভালো না থাকায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে অ্যানেসথেটিস্ট না থাকায় বাধ্য হয়ে বারইয়ারহাটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে পাঁচদিন ভর্তি ছিলাম। ওষুধ ছাড়া হাসপাতালে ১৭ হাজার টাকা বিল দিতে হয়েছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সারওয়াত আরা বলেন, হাসপাতাল থেকে সাধ্যমত সব ওষুধই প্রসূতিদের দেওয়া হয়। শুধু সরকারিভাবে সরবরাহ নেই এমন ওষুধ রোগীকে বাইরে থেকে কিনতে হয়। ফলে হতদরিদ্ররা এখানে কম খরচে জরুরি সেবা পেতেন। কিন্তু একটি শূন্য পদের জন্য সেবাটি বন্ধ থাকা দুঃখজনক।
মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন রানা বলেন, একজন অ্যানেসথেটিস্ট ছাড়া কোনো অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। হাসপাতালে পদটি শূন্য থাকায় প্রসূতিসহ সব অস্ত্রোপচার বন্ধ আছে। শূন্য পদ পূরণে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়, পরিচালকের দপ্তরসহ প্রয়োজনীয় সব জায়গায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। অ্যানেসথেটিস্ট পেলেই আবার অস্ত্রোপচার কার্যক্রম শুরু হবে।