অ্যাডভোকেট কমিশনের কাজ শুরু, বর্তমান অবস্থা জানাবে আদালতে

খাস্তগীর স্কুলের খেলার মাঠ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের বর্তমান অবস্থা আদালতে তুলে ধরতে কাজ শুরু করেছে অ্যাডভোকেট কমিশন। অ্যাডভোকেট গোকূল কান্তি সিনহা রায়কে এ কমিশনের কমিশনার নিয়োগ দেয় আদালত। তিনি গতকাল শনিবার মাঠটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এ সময় মাঠের মালিকানা নিয়ে চলমান মামলার বাদী স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং বিবাদীপক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে অ্যাডভোকেট কমিশনার স্থানীয় তদন্তে স্কুলে আসছেন খবর পেয়ে উপস্থিত হন সাংবাদিকরা। এ সময় সাংবাদিক দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরা। এ সময় দৈনিক আজাদীর মাল্টিমিডিয়া টিমের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, ১৯২৭ সালে কলকাতা গেজেটে মাঠটি স্কুলের জন্য আলাদাভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষও জানত না। এই সুযোগে খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ কাঠা আয়তনের খেলার মাঠটি ২০০৬ সালে একটি পক্ষ মাত্র ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় ক্রয় করে। এর বিরুদ্ধে একই বছর মামলা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ২০১১ সালে মামলার রায় হয়। এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছর আপিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ওই আপিল (৩৯৬/২০১১) মামলা চলছে। মামলার বাদী স্কুল কর্তৃপক্ষ মাঠের বর্তমান চিত্র সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য আদালতে একটি আবেদন করে। কয়েক বছর আগে আবেদনটি করা হয়। মামলার বিবাদী পক্ষ এটার বিরোধিতা করতেন। ফলে বিষয়টি আদালতে ঝুলে ছিল। সর্বশেষ চলতি বছর চট্টগ্রামের ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে একটি অ্যাডভোকেট কমিশন করে দেয়। গত ৩০ এপ্রিল এই কমিশনের জন্য অ্যাডভোকেট গোকূল কান্তি সিনহা রায়কে কমিশনার নিয়োগ দেয় আদালত।

জানা গেছে, নিয়োগকৃত কমিশনারকে তদন্তের জন্য কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্কুল মাঠের বর্তমান অবস্থা এবং মাঠটি দেয়ালের ভেতর রয়েছে কিনা। এছাড়া যে গেজেট মূলে চৌহদ্দি দিয়ে স্কুলের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করে দেয়া হয়, ওই চৌহদ্দির অন্তর্ভুক্ত কোন কোন দাগ রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করা। সিএসে স্কুলের জমি আরএস ও বিএস খতিয়ানে কোন মৌজায় এবং কোন কোন দাগে আছে সেগুলো উল্লেখ করতে বলা হয়।

এদিকে গতকাল গোকূল কান্তি সিনহা স্থানীয় তদন্তের জন্য স্কুল মাঠ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনজীবীও উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে উপস্থিত স্কুলের এক প্রতিনিধি আজাদীকে বলেন, স্কুলের মাঠটি মেপে দেখা হয়। মাঠ দেয়ালের ভেতরে আছে কিনা সেটাও সরেজমিনে দেখেন অ্যাডভোকেট কমিশনার। তিনি পরিদর্শন রিপোর্ট জমা দেয়ার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহেদা আক্তার আজাদীকে বলেন, এটা স্কুলের মাঠ, স্কুলের দখলে আছে এবং স্কুলের বাউন্ডারির ভেতর আছে। সে বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করার জন্য আমরা কোর্টে আবেদন করেছিলাম। তারা (বিবাদী) তাদের মতো আবেদন করে। আদালত সেটা আমলে নিয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে বলেন। তদন্ত করতে আসছিল। সাংবাদিক দেখে উনাদের (বিবাদী) একজন আইনজীবী সাংঘাতিক মারমুখী হয়ে যান। ওই আইনজীবী বলেন, ‘আমরা তদন্তের কাজ করব না, কোর্টকে বলব কাজ করার পরিবেশ নেই’। তবে ওই আইনজীবী যাননি। মাঠে গিয়ে উনাদের কাজ করেছেন।

এদিকে ডা. খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষককর্মচারীদের অভিযোগ, এই খেলার মাঠটি স্কুলের জায়গা। মাঠটি স্কুলের বাউন্ডারির ভেতরে। মাঠটিতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা সারা বছর খেলাধুলা করে। মাঠ নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে মামলা চলছে। মামলা চলাকালীন সম্প্রতি অপর পক্ষ (যারা মাঠটি ক্রয় করেছেন) স্কুলের মাঠটি তাদের নামে নামজারির জন্য ভূমি অফিসে আবেদন করে। অবশ্য স্কুলের মাঠটি নিজের পক্ষে নামজারির জন্য পক্ষটি এর আগেও চারবার আবেদন করেছিল বলে ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপিআর ব্যবস্থা চালু হবে কি না তা ঠিক করবে জনগণ : সালাহউদ্দিন
পরবর্তী নিবন্ধস্বৈরাচার পালালেও অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে : তারেক