অ্যাডগার অ্যালান পো(১৮০৯–১৮৪৯)। কবি, ছোটগল্প লেখক, সাহিত্য সমালোচক এবং ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা গল্পের স্রষ্টা। তার লেখা গল্প, উপন্যাস এবং কবিতার মাঝের ভৌতিকতা এবং রহস্যের আবহাওয়া আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে জানুয়ারি বোস্টনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ডেভিড পো জুনিয়র মায়ের নাম এলিজাবেথ আর্নল্ড পো। ১৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাডগার অ্যালান পো রিচমন্ড ছেড়ে ভার্জিনিয়া আসেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়ায়’ পড়তে। সেখানে গিয়ে তাকে পড়তে হয় চরম দারিদ্র্যের মুখে। চারিদিকে দেনা, দারিদ্র্যের লজ্জায় পো তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দিয়ে রিচমন্ড ফিরে আসতে বাধ্য হন। কিন্তু সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আরো হৃদয়বিদারক ঘটনা। ফিরে এসে তিনি দেখেন তার প্রেমিকা সারাহ (এলমিরা রোস্টার) এর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ক্ষুব্ধ মন নিয়ে তিনি আবার বোস্টন চলে আসেন। বোস্টনে এসে তিনি একটি বায়রনিক কবিতার ছোট বই প্রকাশ করেন। কিন্তু এখানেও অর্থাভাব জেঁকে ধরে তাকে। দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচার জন্য তিনি যোগ দেন আর্মিতে এবং নিজের নাম বদলে রাখেন অ্যাডগার এ. পেরি। কিন্তু তার সৎ মা মারা যাওয়ার পর জন আল্যান তাকে আর্মি থেকে সরিয়ে এনে ওয়েস্ট পয়েন্টে মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেন। নিউইয়র্ক থেকে এরপর পো চলে আসেন বাল্টিমোরে এবং এখানে এসে তিনি ছোটগল্প লেখা শুরু করেন। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তার ‘মিস ফাউন্ড ইন অ্যা বটল’ বইটি প্রকাশিত হয় এবং বইটি ‘বাল্টিমোর উইকলি’ থেকে ৫০ ডলার পুরস্কারও জেতে। একই খ্রিষ্টাব্দে তিনি রিচমন্ডের ‘সাউদার্ন লিটারেরি মেসেঞ্জার’ এ সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং সাহিত্য সমালোচক হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন। সাহিত্য জগতে পো’র অনুপ্রবেশ আনুমানিক বিশ বছর বয়সে। ব্যক্তি জীবনের দৈন্য ও অস্থিরতার মধ্যেও তিনি একে একে সৃষ্টি করেছেন ব্যতিক্রমী ছোটগল্প, বিষণ্ন ও প্রেমের কবিতা। তাঁর রচনা থেকে বাদ পড়েনি রহস্য, অলৌকিকতা, অ্যাডভেঞ্চার কিংবা মৃত্যুর মতো অবধারিত বিষয়। পো’র বিখ্যাত কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘স্বপ্ন’, ‘দাঁড়কাক’, ‘হেলেনের প্রতি’, ‘অ্যানাবেল লি’, ‘দ্য রেভেন’ প্রভৃতি। ‘রু মর্গের হত্যাকাণ্ড’, ‘কালো বিড়াল’, ‘চুরি যাওয়া চিঠি’ প্রভৃতি পো রচিত রহস্য ও গোয়েন্দা গল্প। ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ই অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।