‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’ আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে চিরভাস্বর একটি দিন। যে দিনে মায়ের ভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের মতো ভাষা সৈনিকেরা রক্ত ঢেলেছিলেন রাজপথে। এই দামাল ছাত্র–জনতার আন্দোলন পরে গড়ে দিয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের সিঁড়ি।
জাতিসংঘের উদ্যোগে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হবে। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছর পূর্ণ হবে এদিন। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে ভাষা শহীদদের নিয়ে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। গতকাল রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। এছাড়াও কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। এদিকে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশিদের জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অন্যদিকে মায়ের ভাষা বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা–সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে দেশের সকল মসজিদে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া এবং উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং অন্যান্য স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ইত্যাদি জনসচেতনতামূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে বিভিন্ন কর্মসূচি : যথাযথ মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দুইদিন ব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় গতকাল বিকেল আড়াইটায় জেলা শিল্পকলায় ও ৪টায় শিশু একাডেমিতে শুদ্ধ বানান, সুন্দর হাতের লেখা, কুইজ ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। দিবসের মূল কর্মসূচি শুরু হয় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্য দিয়ে।
এরপর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা–সরকারি, বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এদিন সকাল ৭টায় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে স্ব স্ব বিদ্যালয়, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ, দপ্তর, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রভাতফেরিতে অংশ নেবে। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
এরপর সকাল ১০টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠিত হবে মাতৃভাষায় কবিতা আবৃত্তি, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া মহানগর এলাকার বিভিন্ন উন্মুক্তস্থানে ভাষা আন্দোলন সংশ্লিষ্ট সংবাদ, আলোকচিত্র তথ্য ও ভিডিও প্রদর্শন করা হবে।