চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরের ৪০ নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠে প্রতিবছর কোরবান উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট বসে। গতবার (২০২৪) বাজারটি ইজারা দিয়ে চসিকের আয় হয় ১৪ লাখ সাড়ে ৬০ হাজার টাকা। এবার দুই দফা দরপত্র আহ্বান করেও গতবারের বেশি দর পাওয়া যায়নি। এবার দ্বিতীয় দফায় সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারাদার নিয়োগ করলে গতবারের চেয়ে এবার চসিকের রাজস্ব আদায় ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা কম হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, কোরবান উপলক্ষে এবার নগরে ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর পরিকল্পনা ছিল চসিকের। তবে জেলা প্রশাসন ৮টি বাজার বসানোর অনুমতি দেয়। এর মধ্যে দুই দফায় সাতটি বাজারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিপরীতে ৬টি বাজারের জন্য দরপত্রে অংশ নেয় ইজারাদাররা। দেরিতে অনুমতি পাওয়ায় একটি বাজারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হয়নি। বাজারগুলোর বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হতে পারে।
জানা গেছে, যে ছয়টি বাজারে দরপত্র জমা পড়েছে তাতে সর্বোচ্চ দুই কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা (ছয়টি বাজার মিলিয়ে) টাকার দর পড়েছে। গতবার (২০২৪) চসিক সাতটি অস্থায়ী বাজার ইজারা দিয়ে আয় করে ৫ কোটি ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭০ টাকা। অর্থাৎ এবার সর্বোচ্চ দরদাতাকে চূড়ান্ত করলেও কোরবানি পশুর হাট থেকে রাজস্ব আয় কমবে চসিকের।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, দুইবার দরপত্র আহ্বান করেও কাঙ্ক্ষিত দর পাইনি। আসলে বর্তমানে এগ্রো ফার্মের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অনেক কোরবানিদাতা ওখান থেকে গরু কিনে। বাজারে এটার প্রভাব পড়ে। তাই হয়তো ক্রেতা কমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে ইজারাদাররা কম দর দিচ্ছেন।
এবারও অস্থায়ী বাজার বসতে পারে ৭টি : এবার চসিকের ব্যবস্থাপনায় সাতটি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট বসতে পারে। এগুলো হচ্ছে– ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের কর্ণফুলী পশুর বাজার (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত), ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গা, ৩৯ নং দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ডের আউটার রিং রোডস্থ সিডিএ বালুর মাঠ, ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠ, একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠ ও ৪১ নং ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠ ও বড়পোল খালপাড়ের মাঠ।
এছাড়া ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের ওয়াজেদিয়া মোড়ে হাটের জন্য অনুমতি পেয়েছে চসিক। তবে দুই দফা দরপত্র আহ্বান করলেও এবার কোনো ইজারাদার দরপত্র সংগ্রহ করেনি। গত দুইবার (২০২৪ ও ২০২৩) বাজারটিতে ইজারাদার নিয়োগ দেয়া হয়। তবে অদূরে বিবিরহাট পশুর হাট থাকায় ওয়াজেদিয়া মোড়ের বাজারটি জমেনি। ওই সময় ইজারাদাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করে। যদি এবার শেষ পর্যন্ত বাজারটি বসে তাহলে খাস কালেকশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের পরিকল্পনা আছে চসিকের।
চসিকের ভূ–সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাটের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার (আজ) দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, বড়পোল খালপাড়ের মাঠটি ইজারা দিই কীনা এখনো শিউর না। যেহেতু ওটা খালের পাড়ে তাই ওটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
রাজস্ব আয় কমছে : দরপত্র জমা পড়া ছয়টি বাজারের মধ্যে কর্ণফুলী পশুর বাজারে (নূর নগর হাউজিং এস্টেট অথবা বহাদ্দারহাট এক কিলোমিটার হতে শাহ আমানত ব্রিজের উত্তর পাশ পর্যন্ত) সর্বোচ্চ দর পড়েছে ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ৪০নং উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের পূর্ব হোসেন আহম্মদ পাড়া সাইলো রোডের পাশে টিএসপি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে সর্বোচ্চ দর পড়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। একই ওয়ার্ডের মুসলিমাবাদ রোডের সিআইপি জসিমের খালি মাঠে বসা হাটের বিপরীতে দর পড়ে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রথমবার আহূত ৪১ নং ওয়ার্ডের চরপাড়া আলমগীর সাহেবের মাঠে সর্বোচ্চ দর পড়ে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৩৭নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডের মুনিরনগর আনন্দ বাজার সংলগ্ন রিং রোডের পাশে খালি জায়গার জন্য সর্বোচ্চ দর পড়েছে ২০ লাখ ৫ হাজার টাকা।
সবমিলিয়ে ছয়টি বাজারের জন্য এবার দুই কোটি ২২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা (ছয়টি বাজার মিলিয়ে) টাকার দর পড়েছে। এর আগে ২০২৪ সালে সাতটি অস্থায়ী বাজার থেকে পাঁচ কোটি ছয় লাখ ৩৪ হাজার ৩৭০ টাকা, ২০২৩ সালে সাতটি বাজার থেকে দুই কোটি ৬২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭০ টাকা।
জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের সময় হাটগুলোর জন্য একটি সরকারি মূল্য নির্ধরণ করা হয়। বিগত তিন বছরের গড় মূল্যের উপর ৬ শতাংশ বৃদ্ধি করে এ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ওই হিসেবে এবার সরকারি মূল্য্যের চেয়ে কম আয় হচ্ছে চসিকের।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় গত ১৭ মে পাঁচটি অস্থায়ী বাজারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে চারটি হাটের বিপরীতে দরপত্র জমা পড়ে। দরপত্র জমা পড়া বাজারগুলোর মধ্যে দুটিতে কাঙ্ক্ষিত দর পাওয়া গেছে। এর আগে ৮ মে প্রথম অস্থায়ী বাজারের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ১৭ মে ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ওইদিন মাত্র চারটি পশুর হাটের জন্য দরপত্র জমা পড়ে। চার হাটের মধ্যে আবার দুটিতে দর পড়েছে সরকারি মূল্যের চেয়ে কম।
জানা গেছে, অস্থায়ী হাটগুলোর বাইরে চসিকের ব্যবস্থাপনায় তিনটি স্থায়ী পশুর হাট আছে নগরে। এগুলো হচ্ছে– সাগরিকা পশুর বাজার, বিবিরহাট গরুর হাট ও পোস্তারপাড় ছাগলের বাজার। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ১ থেকে ১০ জিলহজ্ব পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় নগরে কোরবানি পশুর স্থায়ী–অস্থায়ী হাট বসে।