বাঁশখালীতে ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে সাম্প্রতিক কালে বঙ্গোপসাগরে ১৬টি জেলে নৌকা ডাকাতির ঘটনায় সরাসরি জড়িত ১২ জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭।
এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র সহ দেশীয় অস্ত্র, তিন হাজার পিসের অধিক ডাকাতিককৃত ইলিশ মাছ, বিপুল পরিমাণ মাছ ধরার জাল ও ডাকাতের কাজে ব্যবহৃত নৌকা জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয় ও র্যাব সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের অন্তর্ভুক্ত সাগর এলাকায় ৯টি মাছ ধরার বোটে ডাকাতি সংঘটিত হলে র্যাব-৭ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বেরে সাথে নিয়ে তদন্ত শুরু করে।
জলদস্যু বহনকারী ১টি বোট কর্তৃক সাগরে বিভিন্ন বোটে ডাকাতি করা হচ্ছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ, পিএসসির নেতৃত্বে ২টি চৌকস আভিযানিক দল ও র্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার একটি আভিযানিক দলের সমন্বয়ে গভীর সমুদ্রে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ২টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বমোট দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার অভিযান পরিচালনা করে করে দস্যুতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ১২ জন জলদস্যুকে আটক করতে সক্ষম হয়।
আটককৃত আসামিরা হলো মোঃ আনোয়ার পিতাঃ আনসার মেম্বার, লিয়াকত (মাঝি), পিতা- কবির আহমেদ,মোঃ মনির পিতা- মোঃ আবদুল কাদের, আবুল খায়ের (ইঞ্জিন ড্রাইভার) পিতা- মৃত জয়নাল আবেদীন, মোঃ নবীর হোসেন পিতা- মৃত আব্বাছ, নেজামউদ্দিন পিতা- মৃত মুক্তার আহমেদ, হুমায়ুন পিতা- আব্দুল কাদের, সাহেদ পিতা- হাজী আবুল হাসান, সাদ্দাম পিতা- আবু তাহের, আতিক পিতা- মো ইব্রাহিম, এমরান পিতা- মোঃ জহির ও আমানউল্লাহ পিতা- মৃত ইসলাম মিয়া কে আটক করা হয়েছে।
পরবর্তীতে আটককৃত জলদস্যুদের জিজ্ঞাসাবাদ তারা সমুদ্রে বিভিন্ন বোটে ডাকাতি করেছে বলে স্বীকারোক্তি প্রদান করে এবং তাদের হেফাজত থেকে ১টি বোট, আনুমানিক ৩ হাজার পিস ইলিশ মাছ, মাছ ধরার রড় জাল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১৬টি দা ও ছুরি, ১টি বাইনোকুলার, ৪টি টর্চ লাইট, ২টি চার্জ লাইট, ২টি হ্যান্ড মাইক, ৭০টি মোবাইল, নগদ ৫,৭০০ টাকা উদ্ধারসহ আসামিদেরকে আটক করা হয়।
এসময় আটকরা জানায়, পূর্বে তারা বোট নিয়ে সাগরে গিয়ে অল্প পরিমাণ মাছ পায়। ফলে বোটের মালিক আনছার মেম্বার বোটের সদস্যদের কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে তাদের আদেশ প্রদান করে যে মাছ ধরতে না পারলে ডাকাতি করে মাছ নিয়ে আসতে হবে।
আনছার মেম্বার ও তার দলের মূল্য উদ্দেশ্য ছিল অল্প পরিশ্রমে অধিক মুনাফা লাভ করা। এজন্যই নিজের সন্তানকে ডাকাত সর্দার বানিয়ে বোট ডাকাতি করার জন্য সাগরে প্রেরণ করে।
এছাড়াও আটককৃত আসামিদের স্বীকারোক্তি মতে, তারা পূর্বের ৯টি এবং বর্তমানে ৭টিসহ সর্বমোট ১৬টি বোট ডাকাতি করেছে বলে জানা যায়।
আসামি আনোয়ার (আনছার মেম্বারের ছেলে, মূলহোতা)-এর নামে ৩টিসহ প্রত্যেকেরই বিরুদ্ধেই চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানায় জলদস্যুতা, সস্ত্রাসী, ডাকাতি, দুর্ধষ চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টা এবং অপহরণকারী সংক্রান্তে একাধিক মামলা রয়েছে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ, পিএসসি জানান, বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রে গত ৮ সেপ্টেম্বর বিকাল ২টা থেকে ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বমোট দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টার রুদ্ধাশ্বাস অভিযান পরিচালনা করে করে দস্যুতার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ১২ জন জলদস্যুকে আটক করতে সক্ষম হই। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ১টি বোট, আনুমানিক ৩ হাজার পিস ইলিশ মাছ, মাছ ধরার রড় জাল, ৩টি ওয়ান শুটারগান, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১৬টি দা ও ছুরি, ১টি বাইনোকুলার, ৪টি টর্চ লাইট, ২টি চার্জ লাইট, ২টি হ্যান্ড মাইক, ৭০টি মোবাইল ফোন, নগদ ৫,৭০০ টাকা উদ্ধারসহ আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পরবর্তীতে তাদেরকে উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে বাঁশখালী থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।