অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়(১৯২০–২০০৩)। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার, বিশিষ্ট অধ্যাপক, গবেষক ও পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ভূতপূর্ব সভাপতি। নয় খণ্ডে প্রকাশিত তার বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত একটি হিমালয়–প্রতিম কীর্তি এবং এই কীতির্র জন্য তিনি সারস্বত সমাজে বিশেষ শ্রদ্ধার আসন অধিকার করেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা জুন উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁ মহকুমার নকফুল গ্রামে তার মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা অক্ষয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা চারুবালা দেবী। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর রিপন কলেজ থেকে আইএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য নিয়ে বিএ ও এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তার গল্প দেশ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘নবশক্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পাস করে সেই বছরেই নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। পরে রিপন কলেজে ও ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন অসিতকুমার। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে অন্নদাশঙ্কর রায়ের মৃত্যুর পর পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত, নয় খণ্ডে প্রকাশিত বাংলা সাহিত্যের বিস্তারিত ইতিহাসগ্রন্থ। এই গ্রন্থের দুটি সহজপাঠ্য সংস্করণ বাংলা সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত ও বাংলা সাহিত্যের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্তও তার রচনা। তার রচিত অন্যান্য গ্রন্থগুলি বাংলার নবজাগরণ বিষয়ে রচিত। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ ও বাংলা সাহিত্য, বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর, সাহিত্য জিজ্ঞাসায় রবীন্দ্রনাথ হাওড়া শহরের ইতিহাস(২ খণ্ড) ইত্যাদি। তার সম্পাদিত গ্রন্থগুলির মধ্যে শ্রেষ্ঠ গল্প শ্রেষ্ঠ লেখক, জীবনের গল্প গল্পের জীবন, সত্যেন্দ্র রচনাবলী, বিদ্যাসাগর রচনাবলী, সঞ্জীব রচনাবলী উল্লেখযোগ্য। ‘স্মৃতি বিস্মৃতির দর্পণে’ নামে তার একটি আত্মকথাও রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতিত্ব করা ছাড়াও তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গবেষক ছিলেন।
১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বুদ্ধমহাভাব মহাসম্মেলনে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসাবে ভাষণ দেন। চিন্তাবিদ ও গবেষক হিসাবে একাধিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন অসিতকুমার। তিনি ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ মৃত্যুবরণ করেন।