নানা দুর্ঘটনায় প্রতি মাসে শত শত মানুষের অপমৃত্যু আমাদের দেশে এখন স্বাভাবিক প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৩ মার্চ বুধবার সকালে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম চন্দনাইশ দোহাজারী সদরে চট্টগ্রামমুখী একটি বড় গাড়িতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান ব্যাটারি রিকশাচালক মুহাম্মদ রুহুল আমিন এবং দুই শিক্ষার্থী। গণমাধ্যমে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা এবং তিনজনের প্রাণহানির খবর পড়ে অনেকেই হয়তো চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ব্যাটারি রিকশাচালক রুহুল আমিনের বাড়ি চন্দনাইশের জামিরজুরি এলাকায়। তার রয়েছে স্ত্রীসহ ছয়জন শিশু কন্যা সন্তান। এই অবুঝ সন্তানদের এখন কী হবে? কে তাদের দেখাশোনা করবে? রুহুল আমিনের পরিবারের ভরণপোষণ ও কন্যা সন্তানদের পড়ালেখার জিম্মাদারি কে নেবে–তাই আজ বড় জিজ্ঞাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে দেশে নানা স্থানে সড়ক, অগ্নি ও নৌ দুর্ঘটনায় অনেকেই বেঘোরে প্রাণ হারান। এ ধরনের নিত্য দুর্ঘটনার খবর এখন আমাদেরকে খুব একটা নাড়া দেয় না। তা আমাদের গা সওয়া হয়ে গেছে। দুর্ঘটনায় নিহত পরিবারকে সরকার হয়তো এককালীন তিন/চার লাখ টাকা দেয়। অথচ এই টাকায় এই অসহায় পরিবারগুলো কি সারা জীবন চলতে পারবে? সামান্য এই আর্থিক সহায়তায় হয়তো দুই–চার বছর পরিবারগুলো জীবন ধারণ করতে পারবে। তারপর কী হবে? কে নেবে তাদের দায়িত্ব? আমাদের দেশ এখনো এতটা কল্যাণরাষ্ট্র হয়ে ওঠেনি যে, অসহায় দরিদ্র পরিবারগুলো সরকারের ওপর ভরসা রাখবে।
অথচ উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে এবং মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত অসহায় পরিবারগুলোর ভরণপোষণ ও পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় ওই দেশের সরকার। মাসে মাসে তাদের আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তাও দেয়া হয়। ফলে ওই সব দেশগুলোতে দরিদ্র মানুষের হাহাকার তেমন চোখে পড়ে না। দুঃখজনক ব্যতিক্রম, আমাদের প্রিয় স্বদেশ। এখানে কোটি কোটি পরিবার এখনো চরম দারিদ্র্যে ধুঁকছে। তারা তিন বেলা পেটপুরে খেতে পারে না। গরিব পরিবারের সন্তানেরা টাকার অভাবে ঠিকমতো পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারে না। নানা দুর্ঘটনায় বা অসময়ে উপার্জনক্ষম কেউ মারা গেলে সরকার বা সমাজ এই অসহায় পরিবারগুলোর দায়িত্ব নেয় না। এই যে দোহাজারীর রুহুল আমিনের পরিবার অসহায় হয়ে পড়লো, মাসে মাসে বড় অংকের টাকা দিয়ে আমরা এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারি। সমাজ এবং রাষ্ট্রকেই এই অসহায় পরিবারগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে। প্রতি মাসে বিশেষ ভাতা দিয়ে এ ধরনের অসহায় পরিবারগুলোর ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। তাদের সন্তানদের পড়াশোনা এবং কন্যা সন্তানদের বিয়ে–শাদির দায়িত্ব নিতে হবে পরম মমতায়। পরস্পরের প্রতি দরদ, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখাতে হবে আমাদেরকে।
নানা দুর্ঘটনায় পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ মারা গেলে তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। সমাজে যারা বিত্তবান তারা অসহায় পরিবারগুলোর দায়িত্ব নিতে পারেন। কোনো পাড়া বা মহল্লার কেউ হঠাৎ করে মারা গেল, এতে তার পরিবার অসহায় হয়ে পড়লো–তখন এই গরিব অসহায় পরিবারের দায়িত্ব নিতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রকে। পাড়া–মহল্লার যারা বিত্তবান তারা প্রতি মাসে ৩/৪/৫ হাজার টাকা করে ওই অসহায় পরিবারকে দিলে ওই পরিবারটি বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেতে পারে। তাই এককালীন কয়েক লাখ টাকা না দিয়ে এই পরিবারটির মাসিক খরচ জোগানোই বড় জরুরি। তা যেন বিত্তবানরা মাথায় রাখেন। এভাবে এই অসহায় পরিবার প্রতি মাসে ৩০/৩৫/৪০ হাজার টাকা করে পেলে তারা অনায়াসে জীবন ধারণ করতে পারবে। তারা সন্তানদের পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারবে। তাদের সন্তানদের বিয়ে শাদির খরচও জোগাতে হবে বিত্তবানদেরকে।