অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ না দেয়ায় ২৪ শিক্ষক অবরুদ্ধ!

ডুলাহাজারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র অভিযোগ অস্বীকার কলেজ অধ্যক্ষের

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ৬ অক্টোবর, ২০২৩ at ৫:০০ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় এইচএসসি পরীক্ষার শেষদিনে গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা। সর্বশেষ এই পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ না দেওয়ায় ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকা চার কলেজের ২৪ শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে রাখে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষা শেষে এমন পরিস্থিতি হয় এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র ডুলাহাজারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে। খবর পেয়ে চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামানের নেতৃত্বে অবরুদ্ধ চার কলেজের ২৪ জন শিক্ষককে উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডুলাহাজারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের সুপার ও একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রহিম উদ্দিন বলেন, ‘কেন্দ্রের ভেতর অনৈতিক সুবিধা না দেওয়ায় পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের বাইরে সড়কের উপর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করে কিছু উচ্ছৃঙ্খল পরীক্ষার্থী। তবে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় এবং এসি ল্যান্ড স্যারের উপস্থিতিতে অবরুদ্ধ থাকা শিক্ষকরা কেন্দ্রস্থল নিরাপদে ত্যাগ করেন।’

এদিকে শিক্ষক দিবসের দিনে সংঘটিত এই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগী চার কলেজের শিক্ষকরা। এই দাবিতে চকরিয়া সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ বড়য়া স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বরাবর দাখিল করা হয়েছে গতকালই।

চকরিয়া সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ বড়ুয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘ডুলাহাজারা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ডুলাহাজারা কলেজের ২৫০ জন শিক্ষার্থী। সেই কেন্দ্রে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পান আমাদের কলেজের ৯ জন শিক্ষক। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন কক্ষের ভেতর অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ না দেওয়ায় পরীক্ষা শেষে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় পরীক্ষার্থীরা। পরীক্ষা শেষে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয় আমাদের কলেজ ছাড়াও চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজের ২৪ জন শিক্ষককে (নারী শিক্ষকসহ)।’

চার কলেজের ভুক্তভোগী একাধিক শিক্ষক দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘গতবছরের (২০২২) এইচএসসি পরীক্ষায়ও ডুলাহাজারা কলেজ কেন্দ্রে একই ধরনের ঘটনা সংঘটিত করেছিল ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু ডুলাহাজারায় পরীক্ষা কেন্দ্র চালু রাখায় এবারও একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে সাহস দেখিয়েছে কলেজটির পরীক্ষার্থীরা। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।’

চকরিয়া সিটি কলেজের প্রভাষক তছলিমা জান্নাতসহ ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগশিক্ষা বোর্ডের নিয়ম হচ্ছে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা প্রতি ২২ জন পরীক্ষার্থীর বিপরীতে একজন করে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করবেন। ডুলাহাজারা কেন্দ্রের কক্ষগুলোতে ৪০ জনের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। কিন্তু এই সংখ্যক পরীক্ষার্থীর বিপরীতে দায়িত্ব দেওয়া হয় একজন শিক্ষককে। তাছাড়া প্রতি বেঞ্চে পাঁচ ফুট দূরত্বে বসার নিয়ম থাকলেও স্কুলে কেন্দ্র হওয়ায় সেই স্কুলের বেঞ্চগুলো ছিল একেবারে কম দূরত্বের। তাই ডুলাহাজারার এই কেন্দ্রের বেশকিছু বিষয় ছিল প্রশ্নাতীত। এমনকি পুরো পরীক্ষা চলাকালীন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কারো তেমন নজরদারিও ছিল না। এতে করে আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে ডুলাহাজারা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষক দিবসের দিনেও শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবিসহ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।

তবে ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ঘটনাটিকে অসত্য দাবি করে বলেন, ‘শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ একেবারেই ‘বোগাস’। মূলত ডুলাহাজারা থেকে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র সরিয়ে নিতেই চার কলেজের শিক্ষকেরা মিলে ষড়যন্ত্র করছেন। এটি সেই ষড়যন্ত্রেরই বহিঃপ্রকাশ।’

ভুক্তভোগী চার কলেজের ২৪ জন শিক্ষককে আনতে যাওয়া চকরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রাহাত উজ জামান বলেন, ‘ডুলাহাজারা পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা শেষে গোলযোগের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে যাই। কিন্তু শিক্ষকরা কেউ অবরুদ্ধ ছিলেন না। তারা অনভিপ্রেত ঘটনার আশঙ্কা করেছিলেন, তাই সেখান গিয়ে তাদেরকে সরিয়ে আনা হয়।’

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ‘এই ধরনের পরিস্থিতি যে বা যারাই সৃষ্টি করুক ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আগামীতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে দেওয়া হবে না। আজ ওই কেন্দ্রে কেন এই ঘটনা ঘটলো তার ব্যাখ্যা তলব করা হবে ডুলাহাজারা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। প্রয়োজনে আগামীতে সেই কেন্দ্র থাকবে কীনা তাও ভেবে দেখা হবে।’

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত নন বলে জানান। তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে কিংবা উপজেলা থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। আমরা অবশ্যই বিষয়টির খবর নেবো এবং এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতারও বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, অবশ্যই এই ব্যাপারে আইনগত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির রোডমার্চে বাবার ছবি দেখে ছাত্রলীগ নেতা ছেলের বিষপান
পরবর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন আজ