অশ্বিনীকুমার দত্ত : সমাজহিতৈষী লেখক

| সোমবার , ৭ নভেম্বর, ২০২২ at ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

অশ্বিনীকুমার দত্ত। বাঙালি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং লেখক। তিনি ১৮৫৬ সালে ২৬ জানুয়ারি বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ব্রজমোহন দত্ত। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ এ পাশ করেন ও ১৮৭৯ সালে এলাহাবাদ থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়সে আইন (বি.এল) পাস করেন তিনি। ওই বছর তিনি শ্রীরামপুরের চাতরা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বরিশালে বিভিন্ন সমাজহিতৈষী ও কল্যাণমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সুপরিচিত ছিলেন।

জাতীয়তাবাদী রাজনীতি, জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জন্যে তাকে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার বা আধুনিক বরিশালের রূপকার বলে অভিহিত করা হতো। দুর্নীতি, সামাজিক গোঁড়ামি, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। দুর্ভিক্ষে অতুলনীয় সেবাকাজে, চা বাগান শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, ক্লান্তিহীন নেতা। চারণকবি মুকুন্দ দাস ও রাজনীতিবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হকের খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠায় তার সর্বাত্মক অবদান ছিল। বরিশাল শহরে নিজের দান করা এলাকায় পিতার নামে ব্রজমোহন বিদ্যালয় ও ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কুড়ি বছর বিনা বেতনে কলেজে শিক্ষাদান করেছেন। তিনি বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষার্থে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বরিশাল পৌরসভার কমিশনার (১৮৮৫) হয়ে এর ভাইস চেয়ারম্যান (১৮৮৮) ও চেয়ারম্যান (১৮৯৭)-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় বিশেষ ভুমিকা রাখেন তিনি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের মাদ্রাজ অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতীয় কংগ্রেসকে প্রাসাদ রাজনীতি থেকে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রথম কারিগর অশ্বিনীকুমার দত্ত।

তার প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশ বান্ধব সমিতি’র স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। ব্রিটিশ পুলিশ তাকে বরিশালে গ্রেপ্তার করে ও ১৯০৮ সালে তার সমিতি নিষিদ্ধ করে। ১৯১০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্নৌ জেলে বন্দি রাখা হয়। ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী প্রথম বরিশালে এসে অশ্বিনীকুমার দত্তকে জেলার অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন। কলকাতায় রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে ব্রাহ্মধর্মে আকৃষ্ট হন ও ১৮৮২-তে বরিশালে ব্রাহ্মসমাজের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তিনি লেখালেখি জীবনে বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হচ্ছে ‘ভক্তিযোগ’, ‘কর্মযোগ’, ‘প্রেম’, ‘দুর্গোৎসবতত্ত’্ব, ‘আত্মপ্রতিষ্ঠা’, ‘ভারতগীতি’। ১৯২৩ সালের ৭ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস ভুলে যাবেন না : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ চাই