অশনাক্ত লাশের পরিচয় নির্ধারণে ডিএনএ পরীক্ষা

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি ।। স্বেচ্ছাসেবীরা কেউ যোগাচ্ছেন রক্তের ডোনার, কারো হাতে পানি-স্যালাইন আহত ও নিখোঁজের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে স্কুলের কমিটি

| বৃহস্পতিবার , ২৪ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বিকৃত হয়ে যাওয়া মরদেহ শনাক্তে ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব মরদেহের বিপরীতে ১১ জন দাবিদারের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত এই নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে জানান সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) শম্পা ইয়াসমিন। তিনি জানান, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে থাকা ছয় মরদেহ বা দেহাবশেষ থেকে ১১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর বিপরীতে সিআইডিতে এসে এখন পর্যন্ত ১১ জন দাবিদার তাদের রক্তের নমুনা দিয়ে গেছেন। এদের মধ্যে এক পরিবারের একাধিক ব্যক্তিও রয়েছেন। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।

এদিকে এই ঘটনায় নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে সরকার। বুধবার সরকারি তথ্য বিবরণীতে এই অনুরোধ জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতদের প্রকাশিত তালিকায় যাদের সন্তান বা স্বজনের নাম নেই, সেসব পরিবারের সদস্যদের মালিবাগে সিআইডি ভবনে ডিএনএ ম্যাচিংয়ের জন্য নমুনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী ডা. মো. সায়েদুর রহমান গতকাল এ অনুরোধ জানিয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়, সিএমএইচের মর্গে রাখা ছয়টি মৃতদেহ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে মৃতদেহসমূহের ডিএনএ অ্যানালাইসিসের (প্রোফাইলিং) জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যা সিআইডির ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে। নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যদের নমুনা পাওয়া গেলে সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই ডিএনএ ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।

মাইলস্টোনে কমিটি : নিহত, আহত ও নিখোঁজের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে একটি কমিটি করেছে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এই কমিটি গঠন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ফেইসবুক পেইজে জানিয়ে দেওয়া হয়। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাকাডেমিক ডিরেক্টর মো. মনিরুজ্জামান মিয়া ওই পোস্টের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলমকে সভাপতি করে গঠিত এ কমিটিতে সদস্য হিসেবে আছেন মো. মাসুদ আলম (উপাধ্যক্ষপ্রশাসন), খাদিজা আক্তার (প্রধান শিক্ষিক), লুৎফুন্নেসা লোপা (কোঅর্ডিনেটর), মনিরুজ্জামান মোল্লা (অভিভাবক), মারুফ বিন জিয়াউর রহমান (শিক্ষার্থী) ও মো. তাসনিম ভূঁইয়া (শিক্ষার্থী)

স্বেচ্ছাসেবীরা কেউ যোগাচ্ছেন রক্তের ডোনার, কারো হাতে পানিস্যালাইন : জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কটি অনেকটাই ফাঁকা। সিএনজিচালিত টেঙিসহ রিকশার চলাচল আছে, ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খবরের অপেক্ষায় আছেন সাংবাদমাধ্যম কর্মীরা। প্রবেশ গেইটে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। রোগীর স্বজন এবং হাসপাতালে দায়িত্বরত ছাড়া কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবী কয়েক সংগঠন থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়েরও অনেকে ভিড় করেছেন দুর্গতের সেবায়। যাদের কেউ রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন রক্তের ডোনারের খোঁজ দিয়ে। প্রয়োজনে যোগাচ্ছেন খাবার পানি ও স্যালাইনও। গতকাল বুধবার বার্ন ইনস্টিটিউটের সামনের দৃশ্য ছিল এমনই।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা দগ্ধ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের চিকিৎসা চলছে বার্ন ইনস্টিটিউটে। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রবেশ গেইটের পাশেই হেল্প ডেস্ক খুলে তপ্ত রোদের মাঝেই বসে আছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা রোগীর স্বজনদের সহযোগিতা করছেন। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের একটি হেল্প ডেস্ক ব্যানার থাকলেও সেই ব্যানারের সামনে কাউকে দেখা যায়নি। তবে ব্যানারে চারটি মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া যাছে। ছাত্রদলের হেল্প ডেস্কে বসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আক্তার শুভ। তিনি বলেন, সকাল থেকে ২০ জনের মত রোগীর স্বজন আমাদের কাছে সহযোগিতা নিতে এসেছেন। আমরা পানি, স্যালাইন আর রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করছি। রোগীর স্বজনদের জন্য আমাদের ফ্রি বাইক সার্ভিসও আছে। রোগীর স্বজনেরা কী ধরনের সহযোগিতা চাইছেন জানতে চাইলে শুভ বলেন, বেশিরভাগই রক্তের জন্য আসছেন। বিশেষ করে নেগেটিগ গ্রুপের রক্ত। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ডোনার আছে, তারা রক্ত দিচ্ছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিখোঁজের একদিন পর নদীতে মিলল শিশুর মরদেহ
পরবর্তী নিবন্ধরেয়াজুদ্দিনবাজারে নকল প্রসাধনী শিশুখাদ্য মজুদ ও বিক্রি